You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঈদগাঁও লাল ব্রিজ অপারেশন

ঈদগাঁও লাল ব্রিজ অপারেশন (রামু, কক্সবাজার) পরিচালিত হয় দুদফায় – ১৭ই সেপ্টেম্বর ও ২২শে নভেম্বর। প্রথমবার অপারেশনে ২ জন রাজাকারকে আটক করা হয়। এবং দ্বিতীয়বার অপারেশনে ২ জন পুলিশ ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয়, ১০ জনকে আটক করা হয়। দুবারের অপারেশনে বেশকিছু অস্ত্র ও গােলাবারুদ মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। ঈদগাঁও লাল ব্রিজের অবস্থান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও নদীর ওপর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে নির্মিত এ ব্রিজটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যােগাযােগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য অপরিহার্য ছিল। তাই হানাদার বাহিনী এ ব্রিজের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মরিয়া। হয়ে ওঠে এবং পাহারা বসায়।
২৮শে আগস্ট জোয়ারিয়ানালা সেতুর সফল অপারেশনের পর আবদুস ছােবহানের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের এ দলটি ১৭ই সেপ্টেম্বর ১২ কিলােমিটার উত্তরে অবস্থিত ঈদগাঁও সেতুতে অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ব্রিজের দক্ষিণ পাশে মুক্তিযােদ্ধাদের পৌছার খবর পাহারারত রাজাকাররা টের পেয়ে সতর্ক হয়ে যায়। তারাই প্রথমে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর গুলি করতে শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধরাও পাল্টা জবাব দেন। দুজন রাজাকার মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। বাকি রাজাকার ও পুলিশরা মুক্তিযােদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণ ও গােলাগুলিতে ভীত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া ৩০৩ রাইফেলের ৯৫ রাউণ্ড গুলি মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ঈদগাঁও লাল ব্রিজ অপারেশনে মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্যের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন ব্রিজ, সেতু ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরাে জোরদার করে। প্রথমবার অপারেশনের পর হানাদার বাহিনী ঈদগাঁও লাল ব্রিজটি পুনরায় দখল করে এলাকার জনগণের ওপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে। হানাদার বাহিনীর মনােবল ভেঙ্গে দেয়া, অস্ত্র সংগ্রহ ও যােগাযােগ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে ঈদগাঁও সেতুতে আবদুস ছােবহান বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা দ্বিতীয় দফা অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। ব্রিজ অপারেশনে রেকি করার জন্য জামাল হােসাইন ওরফে কমিক জামাল ও আবু তাহেরকে ১৯শে নভেম্বর পথচারী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করতে পাঠানাে হয়। প্রয়ােজনীয় তথ্য সগ্রহ করে মুক্তিযােদ্ধারা ত্রিশঢ়েবা নতুন মুরংপাড়া ক্যাম্প থেকে ২২শে নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে ঈদগাঁও লাল ব্রিজ অভিযান শুরু করেন। গভীর অরণ্য ভেদ করে সন্ধ্যা ৭টায় তারা ঈদগাঁও এলাকার ভােমরিয়াঘােণা নামক স্থানে পৌছান। অপারেশনের সুবিধার্থে মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েকটি গ্রুপে বিন্যাস করা হয়: হেডকোয়ার্টার্স- প্রধান দল আবদুস ছােবহানের অধীনে ৬ জন, প্রথম গ্রুপ- হাবিলদার জলিলের অধীনে ১০ জন, দ্বিতীয় গ্রুপ- ল্যান্স নায়েক আব্দুল কাদেরের অধীনে ১০ জন, তৃতীয় গ্রুপ- নায়েক ফয়েজ আহমদের অধীনে ১০ জন, চতুর্থ গ্রুপ- নায়েক আব্দুস সােবহানের অধীনে ১০ জন, পঞ্চম গ্রুপ- ল্যান্স নায়েক আবদুস সালামের অধীনে ১০ জন, ষষ্ঠ গ্রুপ- ল্যান্স নায়েক ছায়েদুল হকের অধীনে ১০ জন মুক্তিযােদ্ধা। এ গ্রুপগুলাের মধ্যে হেডকোয়ার্টার্স, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রুপ পশ্চিমমুখী হয়ে খালের দক্ষিণের রাস্তার পূর্ব পাশে এবং চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রুপ পূর্বমুখী হয়ে খালের উত্তরে রাস্তার পশ্চিম পাশে পজিশন নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধারা রাত ২টায় হানাদারদের ওপর ফায়ারিং আরম্ভ করেন। তারাও পাল্টা জবাব দেয়। প্রায় আধঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী। মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। এ যুদ্ধে ২ জন। পুলিশ ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয়। ১০ জনকে আটক করা হয়। অবশিষ্টরা পালিয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে ৭টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল এবং ৩০০টি রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়। অতঃপর মুক্তিযােদ্ধারা জনগণকে দেখানাের জন্য শত্রুপক্ষের মৃতদেহগুলােকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের ওপর শুইয়ে রাখেন। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!