You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঈশ্বরগঞ্জ থানা আক্রমণ

ঈশ্বরগঞ্জ থানা আক্রমণ (ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ) পরিচালিত হয় ১২ই সেপ্টেম্বর। এ আক্রমণে পাকসেনা ও রাজাকার-রা পর্যদস্ত হলেও ৭ জন মুক্তিযােদ্ধা ও একজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। তিনটি কোম্পানির ৫৮ জন মুক্তিযােদ্ধা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এখানে শান্তি কমিটির এক নেতা মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়।
ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। থানার ভেতরে বাংকার ও ট্রেঞ্চ খুঁড়ে ২০ জন রেঞ্জার্স ফোর্স, ৩০ জন রাজাকার ও ১০ জন পুলিশের সমন্বয়ে পাকসেনাদের সুদৃঢ় অবস্থান ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের ৩টি কোম্পানি নিজেদের মধ্যে যােগাযােগ করে থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ই সেপ্টেম্বর গৌরীপুরের মাইজহাটি গ্রামের মৌলানা আব্দুর রহিমের বাড়িতে মুক্তিযােদ্ধারা সভা করেন। সেখানে ঈশ্বরগঞ্জ থানা আক্রমণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। আক্রমণ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে ১১ই সেপ্টেম্বর রাতে মাইজহাটি রেলসেতু, রেললাইন ধরে টানা টেলিফোন লাইন ও সড়ক পথের কইট্যাপুরী সড়কসেতু ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়।
১২ই সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় হাবিবুল্লাহ খানের কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার মতিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল থানার পেছনে (উত্তর দিকে), আলতাফ কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার কাজী হাসানুজ্জামান হিরুর নেতৃত্বে একটি দল থানার পশ্চিমে এবং কাজী আলম কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার হাবিবুর রহমান হলুদের নেতৃত্বে একটি দল থানার সামনের দিকে (দক্ষিণ) নলুয়াপাড়া মসজিদের পাশে অবস্থান নেয়। উল্লেখ্য, এর আগে হাবিবুর রহমান হলুদের দল ঈশ্বরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সকল যন্ত্রপাতি বিকল ও রাজাকার কমান্ডার বিলাতী নুরুল ইসলামের বাড়ি, জাটিয়া ইউনিয়নের (ঈশ্বরগঞ্জ কলেজ ক্যাম্পাসে) তহশিল অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে থানার পেছন দিকে অবস্থান নেয়া মতিউর রহমানের দল গ্রেনেড চার্জ করে। এরপর অন্য দুই দল আক্রমণ শুরু করে। তিনদিক থেকে এক সঙ্গে শুরু হওয়া আক্রমণ দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। ইতােমধ্যে আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ মুক্তিযােদ্ধাদের থানা আক্রমণের খবর পেয়ে বাজারে ভীড় করতে থাকে। ফলে যুদ্ধ পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কায় মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ স্থগিত করেন। এ-যুদ্ধে প্লাটুন কমান্ডার মতিউর রহমান, হাতেম আলী, আবদুল খালেক, শামছুল হক শামছু, আনােয়ার হােসেন দুলাল, আবদুল মান্নান ও আবু তাহের শহীদ হন। চরশিহরীর তাইজ উদ্দিন নামে একজন সাধারণ মানুষ গুলিতে নিহত হন। শান্তি কমিটির নেতা উছমান গণি তালুকদার মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়ােব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!