You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঈশ্বরদী কয়লা ডিপাে বধ্যভূমি ও গণকবর

ঈশ্বরদী কয়লা ডিপাে বধ্যভূমি ও গণকবর (ঈশ্বরদী, পাবনা) পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়।
পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের অধিকাংশ স্টিম ইঞ্জিন ছিল কয়লা চালিত। এ ইঞ্জিন চালানাের জন্য প্রচুর পরিমাণ কয়লার প্রয়ােজন হতাে। এ কয়লাগুলাে ঈশ্বরদী রেল স্টেশন থেকে দক্ষিণে রেল লাইনের পূর্ব পাশের একটি নিচু খাদে অর্থাৎ বর্তমান প্রেস ক্লাবের ঠিক পেছন দিকে রাখা হতাে। এ থেকেই স্থানটির নাম হয় কয়লা ডিপাে। এ কয়লা ডিপােকে গণহত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে ঈশ্বরদীর মুক্তিযােদ্ধা ও মানবাধিকার কর্মী এবং পাকবাহিনীর বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে আসা দাশুড়িয়ার ঘন্টু মালিথার কাছ থেকে জানা যায় যে, প্রাথমিক অবস্থায় ঈশ্বরদী স্টেশন রােড সংলগ্ন জামে মসজিদটিকে জামায়াত নেতা খােদা বক্স খান ও ইসমাইল মওলানা পরামর্শ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে রাজাকার বাহিনী গঠিত হলে ঐ মসজিদের পেছনে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এ কারণে মসজিদটিতে প্রায়ই খােদাবক্স খান ও ইসমাইল মওলানার আগমন ঘটত। মসজিদ ও কয়লা ডিপাের মধ্যে ব্যবধান ছিল একটি মাত্র রাস্তা, যা স্টেশন রােড নামে পরিচিত। কয়লা ডিপাের চারপাশে কয়লার স্তুপ থাকায় ভেতরটা ছিল নির্জন। এসব কারণে কয়লা ডিপােকে বধ্যভূমি হিসেবে বেছে নেয়া হয়।
পাকসেনারা ১১ই এপ্রিল ঈশ্বরদীতে পৌছায়। ১২ই এপ্রিল তাদের সহায়তায় অবাঙালিরা সমগ্র ঈশ্বরদীকে নরকে পরিণত করে। এদিনই স্থানীয় জামে মসজিদে নিরাপত্তার জন্য ঈশ্বরদী শহরের কয়েকজন নিরপরাধ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সেখানেও তারা রেহাই পাননি। কুখ্যাত জামায়াত নেতা খােদাবক্স খানের উস্কানিতে পাকসেনারা এসব নিরীহ বাঙালিকে ধরে কয়লা ডিপােতে নিয়ে হত্যা করে। এরপর থেকেই স্থানটি পাকসেনাদের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। ১২ থেকে ১৯শে এপ্রিলের মধ্যে আশপাশের মহল্লা থেকে বহু বাঙালিকে ধরে এনে এখানে হত্যা করে লাশগুলাে গর্তে করে পুঁতে ফেলা হয়। এখানে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে ১৯ জনের নাম জানা যায়। তারা হলেন- শের শাহ রােডের মােয়াজ্জেম হােসেন, আজিজুল গণি চৌধুরী, আজিজুল হক, আজাহার উদ্দীন চৌধুরী ও তরুণ; বাদাম তলার বাবর আলী সরকার, মােত্তালেব আহমেদ খান, নাজমুল হক ও রফিক পাটোয়ারী; পূর্বটেংরির আব্দুল বারেক খলিফা, আবুল হােসেন ও শামসুদ্দিন; পশ্চিম টেংরির খােরশেদ আনােয়ার, শফিকুল আনােয়ার, সাইফুল আনােয়ার জিলু; পাবনা রােডের আমিনুল ইসলাম ও আক্তার হােসেন টোকন; রেল কলােনির জসিম উদ্দীন প্রামাণিক ও পােস্ট অফিস মােড়ের মােকারম হােসেন। শহীদদের স্মরণে ২০১০ সালে এখানে ঈশ্বরদীর মুক্তিযােদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং পাবনা সড়ক ও জনপথের অর্থায়নে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করেন মুক্তিযােদ্ধা আলহাজ্ব তহুরুল আলম মােল্লা। স্মৃতিসৌধে উত্তীর্ণ ফলক থেকে কয়লাডিপােতে নিহত হওয়া শহীদদের কয়েকজনের নাম-পরিচয় জানা যায়। [আবুল কালাম আজাদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!