You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন

ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (কলারােয়া, সাতক্ষীরা) পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এতে ৬ জন রাজাকার, আত্মসমর্পণ করে, ক্যাম্পটি মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসে এবং মুক্তিযােদ্ধারা ৫টি রাইফেল উদ্ধার করেন।
ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্পের অবস্থান ছিল কেরালকাতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এ ক্যাম্প স্থাপন করে। যে-সকল রাজাকার এ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে- কমান্ডার আফিল উদ্দিন (হেলাতলা), আব্দুল মান্নান, আব্দুল কাদের, রফিকুল ইসলাম ও নূর মােহাম্মদ। এরা পাকসেনাদের নিকট থেকে কয়েকটি রাইফেলস এনে গ্রামের লােকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে এবং স্থানীয়দের বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করতে থাকে। তখন কলারােয়ার গয়ড়া বাজার সংলগ্ন চন্দনপুরে মুক্তিযােদ্ধাদের তিনটি ইউনিট ছিল। তিনটি ইউনিটের নেতৃত্বে ছিলেন কমান্ডার আব্দুল গফফার, কমান্ডার মােসলেম উদ্দীন এবং কমান্ডার আবু বকর সিদ্দিক। ইলিশপুরের মুনসুর আলী সরদার (মুক্তিযােদ্ধা গােলাম মােস্তফার পিতা) এবং নবু সরদার ইলিশপুরে রাজাকারদের নির্যাতনের খবর মুক্তিযােদ্ধাদের জানিয়ে দেন। এ খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডাররা ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য মুক্তিযােদ্ধা শওকত আলীকে পাঠান। ক্যাম্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর তিনটি ইউনিটের কমান্ডাররা ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনটি ইউনিট থেকে ১৮ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে কমান্ডার আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে এ দলটি ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনের জন্য ইলিশপুরে আসে এবং কেরালকাতা ইউনিয়নের পশ্চিম পাশের বিলে অবস্থান নেয়। কমান্ডার আব্দুল গফফার অবস্থান নেন পূর্ব পাশে নারকেল গাছের গােড়ায়। গভীর রাতে রাজাকাররা মুক্তিযােদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কেরালকাতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের মধ্যে অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে জোর করে ধরে আনা স্থানীয় কয়েকজন নিরীহ মানুষও ছিল। এক পর্যায়ে কমান্ডার আব্দুল গফফার প্রথম ফায়ার করেন। সঙ্গে-সঙ্গে অন্য মুক্তিযােদ্ধারা কাউন্সিল অফিস ঘিরে ফেলেন। তারা কাউন্সিল অফিসের জানালা দিয়ে গ্রেনেড ছুড়লে রাজাকাররা চিৎকার শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। ৬ জন রাজাকাররা আত্মসমর্পণে রাজি হয়ে হাত উঁচু করে বেরিয়ে আসে। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের আটক করে নিয়ে যান। বাকি কয়েকজন পালিয়ে যায়। বন্দি স্থানীয় লােকদের মুক্তিযােদ্ধারা মুক্ত করেন। মুক্তিযােদ্ধারা ক্যাম্প থেকে ৫টি রাইফেল উদ্ধার করেন।
ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন- কমান্ডার আব্দুল গফফার (বহুড়া), গােলাম মােস্তফা (ইলিশপুর), মাে. সৈয়দ আলী গাজী (গদখালী), মাে. রবিউল ইসলাম (ইলিশপুর), শওকত আলী (চান্দা), লুৎফর রহমান (ইলিশপুর), মাস্টার মাে. ইবাদুল্লাহ (উলুডাঙ্গা), নজিবর রহমান (উলুডাঙ্গা), সােহরাব হােসেন (খােরদো), সুরত আলী (কাঁদপুর), ওমর আলী (কাউরিয়া), আয়ুব আলী (কাউরিয়া), নুরুল ইসলাম (মুরারিকাঠি), জাহাঙ্গীর হােসেন (মদনপুর), আব্দুল জব্বার (বৈদ্যপুর), শেখ শওকত আলী (বৈদ্যপুর), শওকত আলী সানা (বৈদ্যপুর) ও দারবক্স (কোটা)। [মাসুদুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!