ইসলামপুর প্রতিরােধ যুদ্ধ
ইসলামপুর প্রতিরােধ যুদ্ধ (জামালপুর) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের শেষদিকে মধুপুর উপজেলার সীমান্তে। পাকবাহিনী যাতে ইসলামপুরে প্রবেশ করতে না পারে। সেজন্য ১লা এপ্রিল থেকেই প্রতিরােধ গড়ে তােলা হয়।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক ভাষণের পর ইসলামপুর উপজেলায় সাবেক রাশেদ মােশাররফ এমপিএ (স্বাধীনতা-পরবর্তী ভূমি প্রতিমন্ত্রী)-এর নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে। এ পরিষদের সদস্য ছিলেন- মজিরুদ্দিন আহমেদ, জহুরুল হক (ধানু ডাক্তার), সামছুল হক আকন্দ, পরিমল সেন, ডা. আজিজল হক, খােরশেদুজ্জামান (মিস্ত্রী মিয়া), গণি সরদার, যুগল হাশমী, ইদ্রিস আলী, আব্দুর রৌফ, খন্দকার আব্দুল কাদের, খালে পাড়ার মজিবর, লস্কর আলী, শাহ্ মােহাম্মদ জালাল উদ্দিন (কোম্পানি কমান্ডার), বদিউজ্জামান বদি (কমান্ডার)-সহ অনেকে। মনােয়ার হােসেন (মুজাহিদ প্লাটুন কমান্ডার)-এর নেতৃত্বে আনসার ও ছাত্রবাহিনী গড়ে ওঠে।
এপ্রিলের শেষদিকে পাকবাহিনী টাঙ্গাইল হয়ে মধুপুরের দিকে এগিয়ে আসছে এ খবর পেয়ে একে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে এবং ক্যাপ্টেন হাকিমের তত্ত্বাবধানে শাহ্ মাে. জালাল উদ্দিন এবং মাে. আশরাফ আলী আকন্দ একশ মুজাহিদ সৈনিক (সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) নিয়ে তাদের প্রতিরােধে এগিয়ে যান। মুজাহিদ বাহিনীর আরেক কমান্ডার ইসলামপুরের মেজর আনােয়ারুল ইসলামও এতে অংশ নেন। পরবর্তীতে শাহ্ মাে. জালাল উদ্দিন একক নেতৃত্বে ১৬০ জন মুজাহিদ সৈনিক একত্রিত করে জামালপুর ট্রেজারি থেকে ১৬০টি রাইফেলসহ গুলি সংগ্রহ করেন। এ প্রতিরােধ যুদ্ধে ইসলামপুর উপজেলার চরচাড়িয়া, ডেবরাইপ্যাচসহ বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযােদ্ধারাও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পাকসেনাদের ভারী অস্ত্র ও বিমান হামলার কারণে টিকতে না পেরে তারা পশ্চাদপসরণ করেন। যুদ্ধে শাহ্ মােহাম্মদ জালাল উদ্দিন আহত হন এবং ৩০ জন প্রতিরােধ যােদ্ধা পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে পাকসেনারা তাঁদের হত্যা করে। এ ঘটনার পর পাকবাহিনী ২২শে এপ্রিল জামালপুর সদর এবং ২৭শে এপ্রিল ইসলামপুর থানা দখল করে। ইসলামপুরে প্রবেশ করে তারা থানা পরিষদের সিও (ডেভেলপমেন্ট) অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং ১৬-১৭টি বাংকার তৈরি করে সেখানে ভারী অস্ত্র মজুদ করে। এরপর তারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে তাদের নিয়ে হত্যা, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযােগ ও লুণ্ঠনের মতাে জঘন্য ঘটনা ঘটাতে থাকে।
এদিকে শাহ্ মােহাম্মদ জালাল উদ্দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। এক পর্যায়ে তিনি বেশ কিছু মুজাহিদকে নিয়ে ভারতের মেঘালয়ে যান। সেখানকার মহেন্দ্রগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে স্থাপিত ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়ে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং পাকবাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি তিনি ট্রেনিং ক্যাম্পের ইনচার্জ করিমুজ্জামান তালুকদার এমএনএ, রাশেদ মােশাররফ এমপিএ, এডভােকেট আশরাফ হােসেন এমপিএ, এডভােকেট আব্দুল হাকিম এবং আব্দুস সামাদের সহযােগিতায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে মহেন্দ্রগঞ্জ ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠান। [ভােলা দেবনাথ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড