You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (ইপিসিএএফ)

ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (ইপিসিএএফ) ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ইস্টার্ন পাকিস্তান রাইফেলস্ নামে একটি বাহিনী গঠিত হয়, পরবর্তীকালে যার নামকরণ হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ইপিআর)’। ১৯৭১ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ইপিআর)-এর নাম পরিবর্তন করে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আমর্ড ফোর্সেস (ইপিসিএএফ) গঠন করা হয়। ৩রা এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হয়। এ মর্মে ২৪শে এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান সরকারের হােম (সিআর) ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সরকার জারিকৃত গেজেট সম্বন্ধে নােটিফিকেশনে বলা হয়, নং. সিআর ৩পি-৯/৭১(ভি) ১২১-২৪শে এপ্রিল ১৯৭১-গভর্নর ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এর নাম পরিবর্তন করে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (ইপিসিএএফ) নামকরণে সদয় সম্মতি প্রদান করেছেন যা ১৯৭১ সালের ৩রা এপ্রিল থেকে কার্যকরী। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আদেশক্রমে একজন উপসচিব নােটিফিকেশনে স্বাক্ষর করেন।
পাকিস্তানের আজিজ আহমেদ কমিশন রিপাের্টের ভিত্তিতে নতুন এ বাহিনী সংগঠিত হয়েছিল। এ বাহিনীর মােট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। এর সদর দপ্তর ছিল পিলখানায় এবং এ বাহিনী ৬টি সেক্টর ও ১৭টি উইংয়ে বিন্যস্ত ছিল।
এ বাহিনী গঠনের পটভূমি ছিল এরূপ: ৭ই মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেয়ার পর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে প্রতিরােধের জন্য ইপিআর সদস্যরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ২৩শে মার্চ ইপিআর-এর ল্যান্স নায়েক আবুল বাশার ইপিআর প্যারেড গ্রাউন্ডের পাশে একটি বড় গাছের ওপর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালিদের হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। একই সময়ে ২২ বালুচ রেজিমেন্ট পিলখানায় বাঙালি ইপিআর সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। ইতােমধ্যে ইপিআর-এর সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণার বাণী হাতে পেয়ে তা বার্তা আকারে তাদের সমস্ত ইউনিটে প্রেরণ করেন। পিলখানার ইপিআর সৈন্যরা বীরত্বের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরােধের চেষ্টা করেন। বহু সংখ্যক ইপিআর সদস্য পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন। ইপিআর-এর সমস্ত সেক্টর ও উইং-এর সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে সর্বত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকেন।
এমনি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগােষ্ঠী ইপিসিএএফ গঠনে উদ্যোগী হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার্স (প্যারা মিলিশিয়া) সদস্য এনে ইপিসিএএফ গঠন করতে থাকে। প্রায় ৯০% রেঞ্জার্স সদস্য নিয়ে ইপিসিএএফ গঠন করা হয়। তাদের কাছে ইপিআর বাহিনীর মতাে অস্ত্র দেয়া হয়েছিল। তাদেরও একইভাবে ৬টি সেক্টর ও ১৭টি উইংয়ে বিভক্ত করা হয়েছিল। বর্ডার অবজারভেশন পােস্ট (বিওপি) করা হয় ৩৭০টি। এ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল। সেনাবাহিনীর অপারেশনাল কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইস্টার্ন কমান্ড ইপিসিএএফ-কে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করে। প্রতিটি পদাতিক ব্যাটালিয়নে ইপিসিএএফ-এর একটি কোম্পানিকে বিভক্ত করে মােতায়েন করা হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইপিসিএএফ-এর মােতায়েন ছিল এরূপ- হেডকোয়ার্টার্স: পিলখানা, ঢাকা; ডাইরেক্টর জেনারেল: মেজর জেনারেল মােহাম্মদ জামশেদ খান; সেক্টর (৬টি): ঢাকা, যশাের, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা ও চট্টগাম; উইং: ১৭টি।
উইংসমূহ যেভাবে মােতায়েন করা হয়-
ঢাকা সেক্টর (সদর দপ্তর, ঢাকা) : ঢাকা (১৬ নং), ঢাকা এলাকা (১৩ নং)
যশাের সেক্টর (সদর দপ্তর, যশাের) : চুয়াডাঙা এলাকা (৪নং), খুলনা-বাগেরহাট-বরিশাল এলাকা (৫নং) এবং যশাের চৌগাছা এলাকা (১৫নং)
রাজশাহী সেক্টর (সদর দপ্তর, রাজশাহী) : রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-রহনপুর এলাকা (৬নং), নওগাঁ-পত্নীতলা এলাকা (৭নং) ও বগুড়া-সিরাজগঞ্জ এলাকা (১৭নং)
রংপুর সেক্টর (সদর দপ্তর, রংপুর) : দিনাজপুর (৮নং), ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় এলাকা (৯নং) ও রংপুর-লালমনিরহাট এলাকা (১০নং)
কুমিল্লা সেক্টর (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) : কুমিল্লা (১নং), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৩নং) ও কুমিল্লা এলাকা (১২নং)
চট্টগ্রাম সেক্টর (সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম) : ফেনী এলাকা (২নং), চট্টগ্রাম এলাকা ও কক্সবাজারের অংশ (১১নং) এবং চট্টগ্রাম এলাকা (১৪নং)।
ইপিসিএএফ-এর অধিকাংশ সদস্যকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৃহত্তর বিওপিগুলােতে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু অভিযানের সময় এর সদস্যরা একটি দুর্বল বাহিনী হিসেবে প্রমাণিত হয়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে টিকে থাকতে বা সামান্য সময় প্রতিরােধ গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। গ্রামেগঞ্জে ব্যাপক লুটপাট ও নারীনির্যাতনেই তারা বেশি নিয়ােজিত ছিল। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!