You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.06 | ইলাশপুর গণহত্যা (ওসমানীনগর, সিলেট) - সংগ্রামের নোটবুক

ইলাশপুর গণহত্যা

ইলাশপুর গণহত্যা (ওসমানীনগর, সিলেট) সংঘটিত হয় বিভিন্ন সময়ে। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা অনেক লােককে হত্যা করে। তারা এ গ্রামে নারীনির্যাতন চালায় এবং বহু বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
তাজপুরের কিছু দালালের তৎপরতায় ৬ই মে সকালে পাকবাহিনীর একটি দল তাজপুর বাজারে আসে। এরপর তারা পাঁচপাড়া গ্রামের কনুর মিয়ার কাছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লােকদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। প্রকৃত তথ্য দিলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতি হতে পারে ভেবে কনর মিয়া অজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে যেতে চাইলে পাকহায়েনারা তার বুকে ব্রাশফায়ার করে। গুলির আঘাতে তিনি সঙ্গে-সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কনর মিয়ার লাশ ফেলে রেখে হানাদাররা ইলাশপুর গ্রামে যায়। সেখানে সুবীর চক্রবর্তী, বিধুরঞ্জন চক্রবর্তী, রাকেশরঞ্জন চক্রবর্তী, মহেশ কুমার পাল, খােকা। ধর, দিগেন্দ্র কুমার দাশ ও মনােরঞ্জন দেবকে ধরে গুলি করে হত্যা করে। গ্রামের নারীদের ওপর তারা পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখায় এক-এক করে গ্রামের সমস্ত ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়। কদিন পর পাকবাহিনী আবার ইলাশপুরে হানা দেয়। এবার নরেন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, দ্বিজেন্দ্র ভট্টাচার্য, মহেন্দ্র দেব, মহেশ মালাকার প্রমুখকে ধরে রাইফেলের গুলিতে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর একদিন রবিদাস গ্রামের রবীন্দ্র বৈদ্য এবং অশ্বিনী বৈদ্যকে হত্যা করে। এভাবে কিছুদিন পরপর পাকহায়েনারা ইলাশপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে হত্যাকাণ্ড ও নারীনির্যাতন চালায়।
শুধু পাকবাহিনী নয়, তাদের এ দেশীয় দোসর দালালরাও এসব গ্রামে হত্যা ও নির্যাতন চালায়। ১১ই জুন হাফিজ আলী, আব্দুল আহাদ চৌধুরী ও রুস্তম আলী নামের তিন দালাল একটি গাড়িতে করে ইলাশপুরে এসে সােরাব আলীর সন্ধান করে। সােরাব আলীকে না পেয়ে তার বাড়ি থেকে মরম আলী নামের এক আত্মীয়কে ধরে নিয়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড