ইটবাড়িয়া গণহত্যা
ইটবাড়িয়া গণহত্যা (পটুয়াখালী সদর) ৪ঠা মে সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ২৪ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
পটুয়াখালী সদর থেকে ৫ কিমি পশ্চিমে ইটবাড়িয়া ইউনিয়ন অবস্থিত। ৪ঠা মে বেলা ১১টার দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৩০-৩৫ জন সদস্য রাজাকার- ইয়াসিন শিকদার (৬০) ও কালু হাওলাদার (৬৫)-এর নেতৃত্বে পটুয়াখালী থেকে ২টি গানবােটে কচাবুনিয়া নদী হয়ে ইটবাড়িয়া বাের্ড স্কুলের সামনে নেমে পায়ে হেঁটে গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর তারা ৩টি ভাগে ভাগ হয়ে এলাকায় ব্যাপক নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়। একই সঙ্গে তারা একাধিক বাড়িঘরে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ ও নারীধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তারা ১৫-২০ জন মানুষকে আটক করে কচাবুনিয়া নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশগুলাে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এদিন গ্রামের ২৪ জন সাধারণ মানুষ হানাদার বাহিনীর গণহত্যার শিকার হন। তাদের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- করম আলী ফকির (৩৮) (পিতা জবান আলী ফকির; কৃষক), শামসু ফকির (৪০) (পিতা জবান আলী ফকির; কৃষক), মেনাজ ফকির (পিতা রহমান ফকির), আনছার ফকিরের বাড়ির কাজের লােক, আছমত আলী (৪২), মেনাজ শিকদার (৫০) (পিতা মনু শিকদার), আনিস শিকদার (পিতা মনু শিকদার), কদম আলী শিকদার (পিতা আহমদ শিকদার), ছলেমান শিকদার (পিতা আহমদ শিকদার), আছমত আলী (৪২), সেরাজ হাওলাদার (পিতা জোনাব আলী হাওলাদার), ধলু হাওলাদার (পিতা খােরশেদ হাওলাদার), সেকান্দার কাজী (পিতা কাদের কাজী) ও আয়জদ্দিন মাতুব্বর (পিতা হাফেজ মাতুব্বর)।
ইটবাড়িয়া গণহত্যার সময় গ্রামের বিপুল সংখ্যক নারী হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। হানাদাররা ৩০-৩৫ জন যুবতি নারীকে ধরে তাদের পটুয়াখালী সার্কিট হাউস ক্যাম্পে নিয়ে যায়। দিনে পর দিন তাদের সেখানে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। এখানকার বীরাঙ্গনারা হলেন- রুশিয়া বেগম, হাসনা বানু, ভানু বিবি, হাচেন বানু, মনােয়ারা বেগম, ময়ুর নেছা, ফুলবানু, রিজিয়া বেগম, জয়ফুল বিবি, সকিনা বেগম, জামিনা বেগম, আনােয়ারা বেগম, জয়তুন্নেছা প্রমুখ। [ইব্রাহীম খলিল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড