You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক ইনামুল হক চৌধুরী

ইনামুল হক চৌধুরী, বীর প্রতীক (১৯৪৮-২০১১) মদনমােহন কলেজের ২ বার নির্বাচিত ভিপি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ৫নং সেক্টরের অধীন বালাট সাবসেক্টরের বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশিরুল হক চৌধুরী এবং মাতার নাম সাবেরা খানম চৌধুরী।
সিলেট সরকারি পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ইনামুল হক চৌধুরী মদনমােহন কলেজে ভর্তি হন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রচণ্ড সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী ইনামুল হক চৌধুরী মদনমােহন কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬৬৭ এবং ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে দুবার ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। প্রথমবার ভিপি নির্বাচিত হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা আন্দোলনে এবং ২য় বার ভিপি নির্বাচিত হয়ে ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। এসময় তিনি ছাত্র সমাজ এবং সিলেটবাসীর নিকট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু সিলেট সফরে এসে তালতলাস্থ হােটেল গুলশানে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ সভায় ইনামুল হক চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা আন্দোলনের বার্তা সাধারণ মানুষের নিকট পৌছে দেন। বঙ্গন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর তিনি এলাকার ছাত্রযুবকদের আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করতে থাকেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালির ওপর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণার পর ইনামুল হক চৌধুরী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভারতের মেঘালয়ের ইকো-১ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে জুন মাস থেকে মেজর শওকত আলীর নেতৃত্বে ৫নং সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অপারেশন ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা ছাতক সিমেন্ট কারখানায় অবস্থিত পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণে দক্ষতার পরিচয় দেন। গেরিলা যুদ্ধে অসাধারণ সাফল্যের জন্য ইনামুলকে বালাট সাব সেক্টরের কমান্ডার মনােনীত করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আক্রমণসমূহের মধ্যে সুনামগঞ্জের ষােলঘর যুদ্ধ অন্যতম। মুক্তিযােদ্ধারা অতর্কিতে ষােলঘর পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করলে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের যুদ্ধে কতিপয় মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন। এক পর্যায়ে ইনামুল হক চৌধুরীসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা হানাদার সৈন্যদের ঘেরাওয়ের কবলে পড়েন। কিন্তু এ অবস্থায়ও তিনি বিচলিত না হয়ে সহযােদ্ধা নিয়ে কৌশলে হানাদার বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে ডুব-সাঁতার দিয়ে সুরমা নদী পাড় হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে যান। এ-সময় হানাদারদের এলােপাতারি গুলিতে ইনামুল হক চৌধুরী আহত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইনামুল হক চৌধুরীকে ‘বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ইনামুল হক চৌধুরী সিলেটে পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করে আওয়ামী লীগ-এর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৭৯ সালে এবং ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনােনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর স্ত্রীর নাম মরিয়ম চৌধুরী। এ দম্পতির ৪ পুত্র ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সিলেটবাসীর প্রিয় নেতা বীর মুক্তিযােদ্ধা ইনামুল হক চৌধুরী ২০১১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!