ইপিআর ক্যাম্প বধ্যভূমি ও গণকবর
ইপিআর ক্যাম্প বধ্যভূমি ও গণকবর (চাপাইনবাবগঞ্জ সদর) চাপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার খালঘাট এলাকায় মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু সাধারণ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিলের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে পাকহানাদার বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। শহর দখলের পর স্থানীয় মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র সংঘ ইত্যাদি দল ও সংগঠন এবং যেসব বাঙালি পাকহানাদারদের শহরে স্বাগত জানায়, তারা লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা শহর ও আশপাশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের তালিকা প্রস্তুত করে হানাদারদের সরবরাহ করে। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা লােকজন ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে। দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস ধরে তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। চাপাইনবাবগঞ্জে সংগঠিত গণহত্যার স্মৃতি বহন করছে ইপিআর ক্যাম্প গণকবর।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা বিভিন্ন গ্রাম থেকে মেয়েদের ধরে এনে ক্যাম্পে রেখে দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। অনেককে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখত। প্রায় প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন স্থান। থেকে লােকদের ধরে এনে নবাবগঞ্জ নিউমার্কেট, তৎকালীন ট্রেজারি ও হিসাব রক্ষণ অফিসে বন্দি করে রাখত। দালালদের পরামর্শ অনুযায়ী অনেককে ধরে এনে এসব নির্যাতনকেন্দ্রে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। কারো কারো মলদ্বারে রোলার ঢুকানো হতো, সুচ ঢুকানো হতো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। অনেকের নাকে-মুখে গরম পানি ঢালা হতো। তারপর ইপিআর ক্যাম্পের পেছনের দিকে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। মৃতদেহ বিশেষ করে নারীদের লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলত। আর পুরুষদের লাশ মহানন্দা নদীতে নিক্ষেপ করা হতো।
ইপিআর ক্যাম্প বধ্যভূমিতে কতজনকে হত্যা করে কবর দেয়া হয়েছে তার প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি এখানকার গণকবরটি যথাযথভাবে সংরক্ষিতও হয়নি। [মাযহারুল ইসলাম তরু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড