You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইকরদিয়া গণহত্যা

ইকরদিয়া গণহত্যা (অষ্টগ্রাম, কিশােরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৩রা সেপ্টেম্বর। পাকবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকারও আলবদর-রা যুক্ত হয়ে এ গণহত্যা চালায়। এতে ৩৫ জন মানুষ শহীদ হন।
২৮শে আগস্ট পাকহানাদার বাহিনী অষ্টগ্রামে প্রবেশ করে। পাকসেনাদের অষ্টগ্রামে আসার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধবিরােধীরা শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সঙ্গে জড়িত হয়ে লুটতরাজ ও নৃশংস কর্মকাণ্ড শুরু করে। ২৮শে আগস্ট থেকে ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত পাকসেনারা অষ্টগ্রামে অবস্থান করে। এ সময়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। ইকরদিয়া গ্রামের শতভাগ অধিবাসী ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাদের জীবিকা মৎস শিকারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সংখ্যালঘুদের বাসস্থান হওয়ায় এ গ্রামের প্রতি স্থানীয় দালাল এবং পাকসেনাদের শ্যেন দৃষ্টি ছিল। ৩রা সেপ্টেম্বর রাজাকার ও আলবদর সদস্যদের সহযােগিতায় হানাদার বাহিনী ইকরদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। মুহূর্তে সমগ্র গ্রামে হানাদারদের আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষ প্রাণভয়ে যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল তারা প্রাণে রক্ষা পায়। বাকিরা নির্মম গণহত্যার শিকার হয়। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক সব মিলে ৩৫ জনকে এখানে হত্যা করে। গ্রামের হরিচরণের বাড়ির মঠের নিচে চণ্ডীতলায় ঘাতকরা সবার প্রাণ সংহার করে। এ গ্রামের যারা বেঁচে আছে তারা এখনাে সেই লােমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের কথা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে। নিহতদের কিছু স্বজন বুকভরা কষ্ট নিয়ে পিতৃভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে নিহতদের কয়েকজনের নাম বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে। ইকরদিয়ার শহীদদের আত্মত্যাগ গৌরবােজ্জ্বল মহিমায় এ জনপদে স্মরণ করা হয়। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের স্মৃতিচারণ করে এলাকার সাধারণ মানুষ।
ইকরদিয়া গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- সুভাষী দাস, শ্যামাবালা দাস (স্বামী নন্দ কুমার দাস), কৃষ্ণ বিহারী দাস, অক্ৰোমনি দাস, তাপসী দাস (স্বামী রামহরি দাস), শান্তবালা দাস, সাধুচরণ দাস (পিতা সন্যাসী দাস), নারদ দাস (পিতা সাধুচরণ দাস), যােগেশ দাস (পিতা সদুরাম দাস), রামদেব দাস (পিতা কুশাই দাস), নগরবাসী দাস (পিতা তারাজন দাস), বঙ্গবিহারী দাস (পিতা তারাজন দাস), মােহন লাল দাস (পিতা মতিলাল দাস), হরিদাস বৈষ্ণব (পিতা জয়দেব বৈষ্ণব), শুয়ারাম দাস (পিতা রঞ্জিত দাস), মতি লাল দাস (পিতা রঞ্জিত দাস), সুরেন্দ্র দাস (পিতা মহানন্দ দাস), রাজেন্দ্র দাস (পিতা জয়চান দাস), নীরদ দাস (পিতা বলাই দাস), তুলসী দাস (পিতা রামহরি দাস), বিষ্ণু দাস (পিতা মহাদেব দাস), যােগেন্দ্র দাস (পিতা। ক্ষেত্রমােহন দাস), গৌর মােহন দাস (পিতা পলান দাস), যতীন্দ্র দাস (পিতা রাজেন্দ্র দাস), রামনিধি দাস (পিতা কলু দাস), কাঙালী দাস (পিতা অভয় চরণ দাস), গজেন্দ্র দাস (পিতা দুর্গাচরণ দাস), নিবানন্দ দাস (পিতা রাজ দুর্লভ দাস), সােনারাম দাস (পিতা রঞ্জিত দাস) ও দণ্ডধর দাস (পিতা গগন চন্দ্র দাস)। নিহতদের অধিকাংশের মৃতদেহ নদীর পানিতে ভেসে গেছে। বাকিদের মৃতদেহ চণ্ডীতলা মঠের কাছে কুকুর, শুকুনের খাবারে পরিণত হয়। তাদের হাড় ও মাথার খুলি অনেক দিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। [ফারজানা আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!