You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইকরাশি যুদ্ধ

ইকরাশি যুদ্ধ (দোহার, ঢাকা) সংঘটিত হয় ১২ই সেপ্টেম্বর। এ-যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী স্পিড বােটযােগে পালিয়ে যায়।
ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের কাচারীঘাট বাজারের উত্তরে ইকরাশি নামক স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। নবাবগঞ্জ থানার মুক্তিযােদ্ধারা দোহারের মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট সংবাদ পাঠান যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের রসদ বহনকারী রেডক্রস-এর একটি লঞ্চ ঢাকা থেকে ইছামতী নদী দিয়ে গােয়ালন্দে যাবে এবং তারা ঢাকা থেকে দোহারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ সংবাদ পাওয়ামাত্র মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদের রসদ বহনকারী ঐ লঞ্চ আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রথমে নবাবগঞ্জের বান্দুরায় এসে লঞ্চ ভেড়ায় এবং সেখান থেকে ৭ জন যুবককে আটক করে নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ হয়ে কাচারীঘাট বাজারের উত্তর দিকে ইকরাশিতে নিয়ে আসে। তারপর সেখানে তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে লাশ ইছামতী নদীতে ফেলে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. আব্দুল আউয়ালের বাড়িতে আছালত আলী ওরফে আদু নামের এক ব্যক্তি কাজ করত। রাস্তায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্যদের সামনে পড়ে গেলে হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান জানতে চায়। সে তাদের ভুল তথ্য দিয়ে বলে যে, মুক্তিযােদ্ধারা হাসনাবাদ পুরনাে লঞ্চঘাট বান্দুরায় অবস্থান করছেন। হানাদাররা তাকেসহ বান্দুরায় যায়। সেখানে মুক্তিযােদ্ধাদের না পেয়ে তারা দুটি খ্রিস্টান বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। আছালত আলীকে তারা ডা. আব্দুল আউয়ালের বাড়ির সামনে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর হানাদাররা ফাঁকা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে এগুতে থাকে। তাদের ছােড়া গুলিতে আজাহার নামে এক যুবক শহীদ হন। এরপর আওয়ামী লীগএর সভাপতি কমান্ডার সিরাজউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিরাজ মিয়া (ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, রাইপাড়া)-র নেতৃত্বে বাবুল মােল্লা ওরফে কালা বাবুল, মােহাম্মদ রজ্জব আলী মােল্লা, নজরুল ইসলাম বাবুল, বাবুল গাজী, বােরহান উদ্দীন ডাক্তার, সেনাসদস্য তালেব, লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামের সােহরাব উদ্দীন, গ্রুপ কমান্ডার হাওলাদার আলাউদ্দিন, ফারুক মােল্লা, নুরুল ইসলামসহ ১৫-২০ জন মুক্তিযােদ্ধা ঘটনাস্থলে পৌছে পদ্মা নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থান নেন। পােদ্দার বাড়ির ক্যাম্পের মুক্তিযােদ্ধারা পায়ে হেঁটে এসে কাচারীঘাট বাজারের উত্তরে ইকরাশি নামক স্থানে অবস্থান নিয়ে হানাদারদের ওপর আক্রমণ চালান। কমান্ডার সাইদুর রহমান (সেনাসদস্য, চরভদ্রাশন)-এর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল মান্নান খান, হযরত আলী, শম্ভুনাথ চক্রবর্তী, মােহাম্মদ আলী, আব্দুস সালাম, মােহাম্মদ মহিউদ্দিন, ফারুক গাজী, আব্দুল মজিদ প্রমুখ এ-যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযােদ্ধা করম আলী, নূর ওরফে সাধু, কাশেম প্রমুখ জয়পাড়া থেকে পালামগঞ্জ হয়ে এ-যুদ্ধে যােগ দেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের লঞ্চ মুক্তিযােদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযােদ্ধা বাবুল মােল্লা পাকিস্তানি সৈন্যদের লঞ্চ লক্ষ করে প্রথমে গুলি ছােড়েন। তারপর অন্য মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। হানাদার বাহিনীও পাল্টা গুলি করে। মুক্তিযােদ্ধাদের এ আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদাররা স্পিড বােটযােগে পালিয়ে যায়। অতঃপর তাদের বহনকারী লঞ্চটি মুক্তিযােদ্ধারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লঞ্চ থেকে তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও খাদ্যসামগ্রী ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। [রীতা ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!