আশেক মাহমুদ কলেজ নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি
আশেক মাহমুদ কলেজ নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি (জামালপুর সদর) জামালপুর সদরে অবস্থিত। এখানে বহু মুক্তিযােদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজের পুরাতন ও পরিত্যক্ত ডিগ্রি হােস্টেলটি পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মম হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতার স্বাক্ষ্য বহন করছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এ হােস্টেলটিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-রা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে। এখান থেকে স্বাধীনতাবিরােধীদের হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা প্রণয়ন করা হতাে। আজো জামালপুরবাসী এই পরিত্যক্ত ভবনটিকে স্মরণ করে আতঙ্কে শিউরে ওঠে। একাত্তরে স্বাধীনতাবিরােধীরা এটিকে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তােলে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযােদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে এ হােস্টেলে রাখা হতাে। তারপর স্বীকারােক্তি আদায়ের নামে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানাে হতাে। বন্দিদের বেয়ােনেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে নির্যাতন করা হতাে। কারাে-কারাে চোখ বেয়ােনেট দিয়ে খুঁচিয়ে উপড়ে ফেলা হতাে। এভাবে নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ বনপাড়া সংলগ্ন ফৌতি গােরস্থানে ফেলে দেয়া হতাে, যা কুকুর-শেয়ালের খাদ্যে পরিণত হতাে। সন্ধ্যা হলেই ডিগ্রি হােস্টেল সংলগ্ন আশপাশের এলাকায় নেমে আসত থমথমে নিস্তব্ধতা। গভীর রাতে বনপাড়ার লােকজন এখান থেকে ভেসে আসা নির্যাতনের করুণ আর্তনাদ শুনে শিউরে উঠত।
এ টর্চার সেলে জামালপুর শহরের চামড়া গুদাম রােডের আমজাদ হােসেনকে (ছাত্র ইউনিয়ন-এর সঙ্গে যুক্ত) ১০ই আগস্ট বিকেল ৪টায় ধরে আনা হয় এবং ৪ দিন আটক রেখে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানাে হয়। তার দেহে বেয়ােনেট চার্জ করা হয় এবং এক পর্যায়ে তাঁর শ্বাসনালী কেটে দেয়া হয়। ১৪ই আগস্ট রাতে পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের নির্যাতনে নিহত কয়েকজনের মৃতদেহের সঙ্গে আমজাদ হােসেনকেও বনপাড়া সংলগ্ন ফৌতি গােরস্থানে (বর্তমানে মুক্তিযােদ্ধা গণকরবস্থান) ফেলে দেয়া হয়। হানাদাররা ভেবেছির আমজাদ হােসেন আর বেঁচে নেই। কিন্তু সে অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। এ টর্চার সেলে ধরে আনা সাধারণ লােকদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে বেয়নেট দিয়ে খোঁচানাে হতাে। বেয়নেট অথবা আঙ্গুল দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলা হতাে। ডিগ্রি কলেজ হােস্টেলের এই বীভৎস হত্যাকাণ্ড ও নির্মম নির্যাতনে নেতৃত্ব দেয় আলবদর বাহিনীর আশরাফ, বারী, মান্নান ও শরীফসহ রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের নীলনকশা অনুযায়ী জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হােস্টেলটি বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়। আশেক মাহমুদ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল আজিজ, অধ্যাপক আব্দুল গনী, অধ্যাপক গােলাম রাব্বানী, অধ্যাপক শরীফ হােসেন, কবিরাজ বক্তব হােসেন প্রমুখ এ হােস্টেলের সকল হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিল। [কায়েদ-উয-জামান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড