You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক আহমদুর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক আহমদুর রহমান

আহমদুর রহমান, বীর প্রতীক (মৃত্যু ২০০৬) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি চট্টগ্রাম জেলার বােয়ালখালী থানার পশ্চিম কধুরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল আলী এবং মাতার নাম আমাতুন নুর বেগম। তিনি স্থানীয় স্কুলে অধ্যয়ন করেন।
আহমদুর রহমান ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল) বাহিনীতে চাকরির মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ঢাকার পিলখানায় তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ইপিআর-এর নায়েক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে আহমদুর রহমান যশাের ইপিআর সেক্টরের ৪ নম্বর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার শুরু করলে আহমদুর রহমান বিদ্রোহ ঘােষণা করে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বহু পাকসেনাকে হতাহত করতে সক্ষম হন। তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে সংঘটিত প্রায় সকল যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
আহমদুর রহমানের ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল। যশাের জেলার চৌগাছা থানার বরণীর যুদ্ধের কথা তিনি ডায়েরিতে লিখেছেন এভাবে: ‘আমরা সেখানে ভাের তিনটায় অ্যামবুশ নেই। তারপর কমান্ডারের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি। নির্দেশ পাই সকাল ৬টায়। আমাদের সবার অস্ত্র গর্জে ওঠে। শত্রুদের পক্ষ থেকেও আমাদের দিকে গুলি আসতে থাকে। আমাদের হঠাৎ আক্রমণে শত্রুরা বিশৃংখল হয়ে পড়ে। আমরা সেখানে ছিলাম ৩০ জনের মতাে। শত্রু ছিল অনেক। কয়েক প্লাটুন। আড়াই ঘণ্টার মতাে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আমি আহত হই। আহত হলেও আহমদুর রহমান অসীম সাহস ও দৃঢ় মনােবল নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আহমদুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (তাঁর গেজেট নম্বর ৪৭০, খেতাবের সনদ নম্বর ২২০)।
মুক্তিযুদ্ধের পর আহমদুর রহমান বিডিআর-এর যশাের সেক্টরে যােগ দেন। বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি নিজের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। তিনি ২০০৬ সালের ১৮ই জুন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৭ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হােসনে আরা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড