You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.11 | আলীনগর যুদ্ধ (কুলাউড়া, মৌলভীবাজার) - সংগ্রামের নোটবুক

আলীনগর যুদ্ধ

আলীনগর যুদ্ধ (কুলাউড়া, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় ১১ই অক্টোবর। এতে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে ৪ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ ও ৯ জন আহত হন।
আলীনগর কুলাউড়ার একটি ইউনিয়ন ও সিমান্তবর্তী গ্রাম। এখানে পাকসেনাদের বিওপি ক্যাম্প থাকায় এর আগেও দখল পাল্টা-দখলের দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বিওপি-র বাঙালি ইপিআর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বিদ্রোহ করে তা দখলে নিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযােগিতায় পাকিস্তানপন্থী ইপিআর-রা পাল্টা দখলে নেয়। এভাবে আলীনগরে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি তৈরি হয়। এখান থেকে নারীনির্যাতন, লুটপাট ও গণহত্যার ঘটনা ঘটত। ৪নং সেক্টরভুক্ত মুক্তিযােদ্ধাদের পার্শ্ববর্তী ভারত অংশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল লােহারবন্দে। ভারতীয় কর্নেল বাগচী লােহারবন্দের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি প্রশিক্ষণরত ২নং এবং ৩নং ব্রাভাে কোম্পানি থেকে ১০ জন মুক্তিযােদ্ধা। নিয়ে একটি দল গঠন করে আলীনগর পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। এ-যুদ্ধে দলনেতা ছিলেন আবদুল আহাদ চৌধুরী (পরবর্তীকালে মুক্তিযােদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান) এবং উপনেতা ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী (পরে এমপি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী)।
১১ই অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধারা আলীনগর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। পাকবাহিনী পাল্টা-আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। থেমে-থেমে এ-যুদ্ধ ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত চলে। ১৪ই অক্টোবর পাকিস্তানি হানাদাররা পরাজয় স্বীকার করে পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে ৪ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ ও ৯ জন আহত হন। সৈয়দ মাে. আবদুল বাছিত-সহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধার বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের বিজয় অর্জন সম্ভব হয়।
পাকিস্তানি হানাদাররা শক্তি সঞ্চয় করে ১৫ই নভেম্বর আবার মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। আহাদ চৌধুরী ও সৈয়দ মহসিন আলীর অধীনে ৬টি কোম্পানিতে ৯০০ মুক্তিযােদ্ধাকে যুক্ত করা হয়। ৭ জনের একটি দলকে মনু ও টিলাগাঁও রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানের রেলপথ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করার জন্য পাঠানাে হয়। তারা সফলতার সঙ্গে অপারেশন শেষ করেন। ফলে পাকবাহিনী রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। এরপর তারা আলীনগর বিওপি ক্যাম্পের বাইরে আর সৈন্য জড়াে করেনি। তাদের তৎপরতা বিওপি-তে সীমিত হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তারা আলীনগর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। [হাসনাইন সাজ্জাদী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড