আলীপুর গণহত্যা
আলীপুর গণহত্যা (গােদাগাড়ি, রাজশাহী) সংঘটিত হয় ১৭ই অক্টোবর। এতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী শহীদ হন। ১৬ই অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধারা রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের গােদাগাড়ি উপজেলাধীন ফরহাদপুর ব্রিজটি ধ্বংস করেন। এরপর কোমরপুর ব্রিজ ধ্বংসের চেষ্টা চালালে পাকিস্তানি বাহিনী পরদিন বিদিরপুর থেকে কসবা পর্যন্ত পুরাে এলাকায় ব্যাপক লুটতরাজ এবং অধিকাংশ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তারা ফরহাদপুর, কোমরপুর, খারিজাগাতি, নিমতলা, চকপাড়া, আলীপুর প্রভৃতি গ্রামেও লুটতরাজ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এসময় অনেক ছাত্র, যুবক ও কৃষক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। হানাদাররা অনেক নিরীহ মানুষজনকে তারা নির্যাতনকেন্দ্রে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করে।
আলীপুর গ্রামে আবুল কাশেম (পিতা সােবহান মণ্ডল) নামে একজন মাওলানা বসবাস করতেন। এলাকাবাসী তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করত। তারা বিপদে-আপদে তার সাহায্যপ্রার্থী হতাে এবং প্রয়ােজনে তার পরামর্শ গ্রহণ করত। মাওলানা কাশেমের উর্দু ভাষায় প্রচুর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাই পাকিস্তানি সেনারা মাঝে-মধ্যে তাঁর কাছে এসে উর্দু ভাষায় আলাপচারিতা করত। মুক্তিযােদ্ধারা ফরহাদপুর ব্রিজ ধ্বংস করলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা এলাকায় এসে পুরাে গ্রামটিতে লুটপাট চালায় এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের ভয়ে সাহায্যের আশায় এলাকার অধিকাংশ নিরীহ মানুষ মাওলানা কাশেমের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তিনি আশ্রিতদের নিরাপত্তার ব্যাপারে চিন্তিত হন। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী তাঁর বাড়িতে ঢুকে মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। মাওলানা কাশেম এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং হানাদারদের তাঁর বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। এজন্য পাকিস্তানি সেনারা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং অত্যন্ত নির্দয়ভাবে তাকে হত্যা করে।
এদিন পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। গণহত্যায় যারা শহীদ হন, তারা হলেন- মাওলানা কাশেম, সাদেক আলী কানন (পিতা রইস উদ্দিন শেখ), মাে. ওসমান শেখ ও তার ভাই মাে. এসলাম শেখ (পিতা আলহাজ মনির উদ্দিন শেখ), সায়ের আলী (পিতা নজর আলী), এনামুল পাগলা (পিতা সােলেমান), শাহজাহান (পিতা জব্বার আলী), আক্তার আলী (পিতা সােলেমান), আবদুর রহমান (পিতা ফাইজুদ্দিন) প্রমুখ। এঁদের মধ্যে মাওলানা কাশেম, মাে. ওসমান শেখ ও মাে. এসলাম শেখকে মাওলানা কাশেমের বাড়ির পাশে গণকবর দেয়া হয়। অন্য একটি গণকবরে রাখা হয় সায়ের আলী, এনামুল পাগলা ও আবদুর রহমানকে। পাকিস্তানি বাহিনী সাদেক আলী কাননকে মাটিকাটা ইউনিয়ন কাউন্সিলে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের পর হত্যা করে। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদিনের গণহত্যায় সহযােগিতা করে ফরহাদপুরের নাজেল, ডুমুরিয়ার মুন্তাজ আলী ও প্রেমতলীর রাজাকার কমান্ডার তাহাসেন আলী। [মােস্তফা কামাল।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড