You dont have javascript enabled! Please enable it!

আশফরদি গণহত্যা

আশফরদি গণহত্যা (নগরকান্দা উপজেলা, ফরিদপুর) সংঘটিত হয় ৩১শে মে। এতে ১০ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
২৯শে মে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত চাদহাট নামক স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে জনতা ও মুক্তিযােদ্ধাদের যৌথ প্রতিরােধে পাকহানাদের পরাজয় ঘটে। এতে ১ জন ক্যাপ্টেন, ২ জন লেফটেন্যান্টসহ ২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। চাঁদহাট যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশােধ নিতে হানাদার বাহিনী ৩০ ও ৩১শে মে চাঁদহাট অভিমুখে অগ্রসর হয়ে ভাঙ্গা, নগরকান্দা, মােকসেদপুর, কাশিয়ানি প্রভৃতি স্থানে অভিযান চালায়। ৩০শে মে এক গ্রুপ নগরকান্দা হতে দক্ষিণ দিকে ঈশ্বরদী, কোদালিয়া, পাইটকান্দি-ঘােড়ামারা বিলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় কোদালিয়া গ্রামে অর্ধশত নারী ও শিশুকে হত্যা করে। ৩১শে মে দ্বিতীয় গ্রুপ ভাঙ্গা সদর উপজেলা হতে পশ্চিম দিকে চন্ডিদাশদি, সােনাখােলা, আলগি হয়ে আশফরদির দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় চণ্ডিদাশদিতে ২০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা ও গ্রামে অগ্নিসংযােগ করে। এরপর তারা ৬-৭ কিলােমিটার দূরে আশফরদি গ্রামের মীর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। গ্রামের লােকজন পাকসেনাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে প্রাণ রক্ষার্থে বাড়ির বাহির অঙ্গনে গাছ থেকে ডাব পেড়ে চেয়ার-টেবিল পেতে টুপি মাথায় দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। তাদের ধারণা ছিল, এসব করলে পাকসেনারা তাদের ক্ষতি করবে না। কিন্তু হানাদাররা সেখানে পৌছেই উপস্থিত জনতার ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ জন লােক নিহত হয়। হত্যার পর তারা গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। গ্রামের অন্য লােকজন নিরাপত্তার জন্য দূরে সরে পড়ে, কেউ-কেউ পাটক্ষেতে আশ্রয় নেয়। এরপর হানাদাররা চাঁদহাটের উদ্দেশে আশফরদি গ্রাম ত্যাগ করে।
আশফরদি গণহত্যায় শহীদদের কয়েকজন হলেন- গফুর মীর (পিতা সাদেক আলী মীর), মহম্মদ মীর (পিতা গফুর মীর), রওশান মীর (পিতা এলেম মীর), জব্বার মীর (পিতা গঞ্জর মীর), বাদশা মীর (পিতা জব্বার মীর), শাহজাহান মুন্সী, লাল শরীফ, হাতেম মীর এবং হিন্দুধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তি। দুটি পরিবারের পিতা-পুত্র এ গণহত্যার শিকার হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর আশফরদি গ্রামের সমস্ত মানুষ অন্য গ্রামে পালিয়ে যায়। শহীদদের সমাহিত করার কেউ ছিল না। ২-৩ দিন পর ২-১ জন করে লােক গ্রামে প্রবেশ করে। তারা কোনােরকমে একই কবরে পাঁচ-সাতজনকে সমাহিত করে। [মীর ইউসুফ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!