বীর প্রতীক আলী আশরাফ
আলী আশরাফ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা ও বিমান বাহিনীর সৈনিক। তিনি ১৯৫০ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. আলী হায়দার এবং মাতার নাম আমিনা খাতুন। তিনি ১৯৬৫ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ময়মনসিংহ এম এম কলেজে এক বছর অধ্যয়নের পর তিনি করাচি চলে যান এবং ১৯৬৭ সালে করাচির। ইসলামিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। করাচিতে তিনি বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন।
আলী আশরাফ কর্মজীবনের শুরুতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীত যােগ দেন। ১৯৬৬ সালে তিনি করাচিতে গিয়ে নন-কমিশন অফিসার (এনসিও) হিসেবে বিমান বাহিনীতে যােগদান করেন। ১৯৭০ সালে বিমান বাহিনী ঢাকায় বেইজ স্থাপন করলে তাকে এখানে বদলি করা হয়। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ৭০-এর নির্বাচনের পর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালিদের ওপর দমন-পীড়ন এবং ২৫শে মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে তিনি ঢাকা থেকে পালিয়ে ময়মনসিংহে যান। জুন মাসে তিনি ময়মনসিংহের ঢালু সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাঁকে মেজর জিয়ার নেতৃত্বাধীন ‘জেড’ ফোর্সে নিযুক্ত করা হয়। এখান থেকে তাঁকে যুদ্ধে না পাঠিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহী ছিলেন। পরে তাঁকে ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টরে পাঠানাে হলে তিনি সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার সুযােগ পান। সেখানে বিমান বাহিনীর লােক হিসেবে তাঁকে স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদুল্লাহ খানের অধীনস্ত করা হয়। এ সেক্টরের অধীনে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে তিনি এক দল মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর থানায় আক্রমণ করেন। আক্রান্ত হয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে গেলে প্রচুর অস্ত্র ও গােলাবারুদ তাঁদের হস্তগত হয়। অপারেশন সফল করে ফেরার পথে তারা পাকিস্তানিদের দ্বারা আক্রান্ত হন। এ-সময় আলী আশরাফ গুলিবিদ্ধ হন। ৫টি গুলি তার গায়ে লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্ত তাঁর হেঁটে যাওয়া পথে রক্তের দাগ অনুসরণ করে একদল পাকসেনা ঐ বাড়িতে এসে তাঁকে ধরে ফেলে। তাঁকে তারা আটক করে বগুড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানাে হয়। তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশায় তাঁকে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এক সময় তাকে ধৃত অন্যদের সঙ্গে নাটোর জেলে পাঠানাে হয়। সেখান থেকে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে তারা পালিয়ে এসে আবার মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আলী আশরাফকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি মেজর হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আনােয়ার বেগম। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড