বীর প্রতীক আলী নেওয়াজ
আলী নেওয়াজ, বীর প্রতীক (১৯২৮-১৯৯৮) একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯২৮ সালের ১১ই মার্চ ফেনী জেলার ফাজিলপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফেলু মিয়া এবং মাতার নাম নূর খাতুন।
আলী নেওয়াজ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে পদায়ন পান। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ৩১শে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী সেনানিবাসে বাঙালি সৈনিকদের ওপর আক্রমণ করলে সকাল পর্যন্ত প্রতিরােধ যুদ্ধ চলে এবং যুদ্ধ শেষে আলী নেওয়াজ ফুলবাড়িতে অন্যান্য বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে ডিফেন্স নেন। কয়েকদিনের ব্যবধানে পাকসেনারা ফুলবাড়ি আক্রমণ করে। ফলে তাঁরা সেখান থেকে খােলাহাটি চলে যান। বিভিন্ন স্থানে প্রতিরােধ যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। অতঃপর এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতে পৌঁছান। সেখানে কামারপাড়া ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। এখান থেকে তিনি রামগতি, ফুলবাড়ি, চরখাই রামনগর, জলপাইতলী, রাজাই, আমবাড়ি, গৌরীপুর, মন্নথপুর প্রভৃতি স্থানে হামলা চালিয়ে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তিনি ‘জেড’ ফোর্সে যােগ দেন। ‘জেড’ ফোর্সের অধীনে তিনি কুড়িগ্রামের চিলমারী, জামালপুরের নকশী বিওপি, সিলেটের গােয়াইনঘাট প্রভৃতি যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুক্তিযােদ্ধা আলী নেওয়াজকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উন্নীত হন। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শাহেদা বেগম। ১৯৯৮ সালের ২৭শে আগস্ট মুক্তিযােদ্ধা আলী নেওয়াজ মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড