You dont have javascript enabled! Please enable it! আলাদিপুর স্কুলমাঠ গণহত্যা (রাজবাড়ী সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

আলাদিপুর স্কুলমাঠ গণহত্যা

আলাদিপুর স্কুলমাঠ গণহত্যা (রাজবাড়ী সদর) সংঘটিত হয় মে মাসের প্রথম দিকে। এতে ৩৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
ঘটনার আগের দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজবাড়ীর বিহারিরা ট্রেনে করে মাছপাড়ায় এসে অবস্থান নেয়। তাদের মূল টার্গেট ছিল স্থানীয় জমিদারবাড়ি, কুণ্ডুপাড়া, সাহাপাড়া, দত্তপাড়া, মথুরাপুর, বরুলিয়া, কালিনগর, রামকোল ইত্যাদি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলােতে হামলা ও লুটপাট করা। পরের দিন ভাের ৪টায় তারা মাছপাড়া ও মথুরাপুর গ্রামে বাড়িঘরে আগুন দেয়। এতে শতাধিক বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যায়। স্থানীয় রাজাকারদের সহযােগিতায় পাকসেনারা আলাদিপুর বাজার থেকে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও গুলি করে। এ-সময় গ্রামের মানুষ গুলির শব্দে জেগে ওঠে। তারা আগুনের লেলিহান শিখা দেখে এবং কাঠ-বাঁশ পােড়ার শব্দে হতভম্ব হয়ে দিগ্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। সকল বয়সের মানুষ প্রাণের ভয়ে পালাতে থাকে। নারী ও শিশুদের আর্তচিৎকারে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাড়িঘর পােড়ানাের পাশাপাশি হনাদাররা মাছপাড়ার ১৪ জন এবং মথুরাপুরের ২১ জন মােট ৩৫ জন নিরীহ মানুষকে আলাদিপুর স্কুলমাঠে নিয়ে হত্যা করে। এ গণহত্যায় মাছপাড়ার যারা শহীদ হন, তাদের মধ্যে ১২ জনের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন- হরেন্দ্রনাথ দাস, বসুমতি দাস, যুগল দাস, গয়েশ চন্দ্র দাস, ধীরেন চন্দ্র দাস, শেফালী বেগম, ইয়াছিন, হামিদা খাতুন, লয়মান বিবি, জায়দা বিবি, আবুল কাশেম ও মজিবর রহমান।
মথুরাপুরের শহীদদের মধ্যে ১০ জনের নাম জানা যায়। তারা হলেন- ষষ্ঠিচরণ দাস, গােপাল চন্দ্র দাস, কুমারেশ দাস, অজিত কুমার দাস, পলান চন্দ্র দাস, ভৈরব চন্দ্র দাস, বিজয় কুমার দাস, তারাপদ দাস, অনুকূল চন্দ্র দাস ও বীরেন্দ্রনাথ দাস। এছাড়া এ-সময় রামকোলের নগেন্দ্রনাথ দাস নামে একজন শহীদ হন।
পরবর্তী সময়ে কালুখালী মাছপাড়া এলাকায় আরাে কয়েকজন শহীদ হন। তারা হলেন- খন্দকার আবুল হােসেন, সুধীর কুমার দাস, নরেন্দ্র শিকদার, মমতাজ আলী বিশ্বাস, হরেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ। শহীদদের অনেককে এখানে সমাহিত করা হয়। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড