You dont have javascript enabled! Please enable it!

আলতাফ বাহিনী

আলতাফ বাহিনী (মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী) মুক্তিযুদ্ধকালে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা একটি মুক্তিবাহিনী বাহিনীর প্রধান মাে. আলতাফ হােসেনের নামানুসারে এ বাহিনী আলতাফ বাহিনী নামে পরিচিতি পায়। এ বাহিনী এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ সহযােগিতায় পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বাহিনী প্রধান মাে. আলতাফ হােসেন ১৯৩৭ সালের ১৫ই জুন পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব আ. কাদের জোমাদ্দার এবং মাতার নাম মােসাম্মৎ লালবরু বেগম। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বায়লাখালী হাইস্কুলে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নেন। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাসের পর ছুটি নিয়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫শে মার্চের গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার পর স্বাধীনতার টানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে না ফিরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
মাে. আলতাফ হােসেন ২৬শে মার্চের পর এলাকার ছাত্র, যুবক, ছুটিতে আসা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের একত্রিত করে নিজস্ব বাহিনী গঠন করেন। এসময় তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি এডভােকেট কাজী আবুল কাশেমের সহায়তায় মির্জাগঞ্জের দেউলি, বেতাগীর কাজীরহাট এবং বাউফলের বগায় মুক্তিযােদ্ধাদের ৩টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ সকল ক্যাম্পে হাবিলদার আশরাফ আলী, হাবিলদার আবদুল হাই, হাবিলদার আবদুল বারেক প্রমুখ প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ তিনটি ক্যাম্পে যুদ্ধকালীন সময়ে প্রায় ৩ হাজার মুক্তিযােদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গ্রামে-গ্রামে চাঁদা তুলে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হতাে। আলতাফ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ছিলেন নলিনী চক্রবর্তী, নারায়ণ শীল, সৈয়দ দেলােয়ার হােসেন, সামসুর রহমান খান, ফোরকান কাজী, সাদেম আলী হাওলাদার, মতিউর রহমান সিকদার, কাঞ্চন সিকদার, আজিজ মল্লিক, ফিরােজ, নূর মােহাম্মদ, শিবা, নূরু মিয়া, চেরাগ আলী ফকির, হারুন-অর-রশিদ প্রমুখ। মির্জাগঞ্জের দেউলি গ্রামে এ বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে কয়েজনকে হত্যা করে। ২৩শে নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা বেতাগী উপজেলার বদনীখালী বাজারে অগ্নিসংযােগ করে। আলতাফ বাহিনী বেতাগী থানার মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে এবং কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর টিকতে না পেরে হানাদার বাহিনী বরগুনায় পালিয়ে যায়। ২৪শে নভেম্বর আলতাফ বাহিনী বেতাগী ও বামনা উপজেলার মুক্তিযােদ্ধাদের সহায়তায় বামনা ও বেতাগী হানাদারমুক্ত করেন। পটুয়াখালী অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমামের সহায়তায় দক্ষিণাঞ্চলের আরাে অনেক সম্মুখ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মাে. আলতাফ হােসেন ও তাঁর বাহিনী। এসব যুদ্ধের মধ্যে বামনা থানা যুদ্ধ, পাথরঘাটা থানা যুদ্ধ, মঠবাড়িয়া থানা যুদ্ধ, দেউলির যুদ্ধ, বরগুনা জেলা হানাদারমুক্ত করা উল্লেখযােগ্য। ২৪শে নভেম্বর বামনা থানা দখলের পর তিনি যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং ‘হায়দার’ নামে খ্যাত হন। তিনি এ নামে মুক্তিযােদ্ধা সনদও প্রাপ্ত হন। মীর্জাগঞ্জ উপজেলায় মেহেন্দিয়াবাদ-দেউলিবাজার থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে কমান্ডার মাে. আলতাফ হায়দার সড়ক। ৬ সন্তানের জনক মুক্তিযােদ্ধা আলতাফ হায়দার বর্তমানে নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন ও ইব্রাহীম খলিল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!