You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে আলফাডাঙ্গা উপজেলা (ফরিদপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

আলফাডাঙ্গা উপজেলা

আলফাডাঙ্গা উপজেলা (ফরিদপুর) ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘােষণা করলে সারাদেশের মতাে আলফাডাঙ্গার মানুষও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে ছাত্র সমাজের স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন, ৩রা মার্চ পল্টনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক ভাষণের পর আলফাডাঙ্গার মানুষ তাদের পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা বুঝে নিয়েছিল। এরপর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-এর নেতৃত্বে তারা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে থাকে।
২৫শে মার্চের পর থেকে আলফাডাঙ্গায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। কামার গ্রাম হাইস্কুল মাঠ, গােপালপুর বাজার, টাবনি ঘােষবাড়ি, মহিষারঘােপ প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ এবং হেলেঞ্চা গ্রামের গােকুল সাহার বাড়িতে ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহযােগিতায় বাঙালি সেনাবাহিনীর সুবেদার আব্দুস সাত্তার, ইপিআর সদস্য ওবায়দুর হক খােকা মীর, পুলিশ সদস্য ময়েন উদ্দিন শেখ, এ কে এম হাফিজ উদ্দিন, ইজাজ উদ্দিন তালুকদার প্রমুখ প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অনেকে পরে ভারত থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে আলফাডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় থানা কমান্ডার ছিলেন এম এ মান্নান, বীর বিক্রম (পিতা এম এ লতিফ, চন্দ্রা)। ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার (পিতা আজাহার উদ্দিন তালুকদার, নওয়াপাড়া) ও খান আকরামুজ্জামান (পিতা নওসের আলী খান, পানাইল)। এছাড়া হেমায়েত হােসেন মােল্যা, এ কে এম হাফিজ উদ্দিন (পিতা আব্দুস সাত্তার শিকদার, পবনবেগ), বখতিয়ার হােসেন বতু (পিতা আব্দুর রহিম শেখ, তিতুরকান্দি), ফ্লাইট সার্জেন্ট আব্দুর রাজ্জাক পিতা মানিক মােল্যা, রুদ্রবান), ওহিদুর রহমান (পিতা মজিবর রহমান, ধুলজুড়ি), হাফিজ উদ্দিন, আ. হান্নান মুন্সি, লুঙ্কার রহমান, আদম খাঁন, মহিউদ্দিন আহমেদ, মাে. আক্কাস প্রমুখ বিভিন্ন পর্যায়ে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলায় মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন জালাল উদ্দিন আহমেদ ও শেখ আকরাম হােসেন। মুক্তিযুদ্ধের সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার জন্য হাবিবুর রহমান সর্দার, আ. মালেক মাস্টার, রউফ মিয়া, নকুল চন্দ্র কর্মকার প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে হাবিবুর রহমান সর্দার, আব্দুল মালেক মাস্টার, মাস্টার আব্দুর রউফ মিয়া, নকুল চন্দ্র কর্মকার, নিতাই কুণ্ডু, হারেজ উদ্দিন মিয়া, আব্দুল জলিল ডাক্তার, সৈয়দ মনিরুল ইসলাম, ওবায়দুর হক খােকা মীর, জালাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখের নাম উল্লেখযােগ্য।
যশাের থেকে অস্ত্রসহ পালিয়ে আসা ইপিআর সদস্য ওবায়দুর হক খােকা মীর মালা গ্রামে মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ৭ই মে তিনি কাশিয়ানীর আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হােসাইনের সঙ্গে যােগাযােগ করতে গেলে শান্তি কমিটির সদস্য কুসুমদী গ্রামের আব্দুল মান্নান মােস্তান ও তার দুই পুত্র মওলানা আলী হায়দার ও জাহিদসহ কতিপয় রাজাকারতাঁকে পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। খােকা মীর কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
১০ই মে সকালে আব্দুল মান্নান মােস্তান ও তার দুই পুত্র মালা গ্রামের মধ্য দিয়ে কুসুমদী যাওয়ার সময় সৈয়দ হাবিবুল হক, সৈয়দ শহিদুল হক কুটি, সৈয়দ এমদাদুল হক, আনসার মৃধাসহ স্বাধীনতাকামী যুবকরা তাদের প্রতিরােধ করেন। এক পর্যায়ে মওলানা হায়দার প্রতিরােধকারীদের হাতে নিহত হয়। অন্য দুজনকে আটক করা হয়। ১০ই মে পাকবাহিনী আলফাডাঙ্গায় অনুপ্রবেশ করলেও তারা কোনাে ক্যাম্প স্থাপন করেনি। তবে আলফাডাঙ্গা বাজারের পাশে একটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। রাজাকারদের সহযােগিতায় পাকবাহিনী কাশিয়ানী ও ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্প থেকে আলফাডাঙ্গায় এসে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযােগ চালাত। এদিন শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সহযােগিতায় পাকবাহিনী আলফাডাঙ্গার মালা গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে বিশিষ্ট সমাজসেবক আসাদুজ্জামানসহ ৭ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে, যা মালাগ্রাম গণহত্যানামে পরিচিত।
এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে আলফাডাঙ্গায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির নেতা ও সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে আবু বকর মিয়া (পিতা আ. ওয়াজেদ মিয়া, শুকুরহাটা; আলফাডাঙ্গা উপজেলা শান্তি কমিটির সভাপতি), আনােয়ারুল হক নান্না ডাক্তার (পিতা মােকসেদুল হক, মাগুরা; আলফাডাঙ্গা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ও রাজাকার সংগঠক), আব্দুল বারী মিয়া, আমিরুল ইসলাম ওরফে উকিল শেখ, রুস্তম ফকির, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুর রউফ মাস্টার (বিডি চেয়ারম্যান, টগরবন্দ), আব্দুল মান্নান মােস্তান, আব্দুর রাজ্জাক রাজা মিয়া প্রমুখের নাম উল্লেখযােগ্য।
আলফাডাঙ্গা উপজেলায় নাসির মৌলভী (পিতা মুন্সি আলী আহমেদ, লালগােলা; জামায়াতে ইসলামীর আমীর, আলফাডাঙ্গা; রাজাকার কমান্ডার), আনােয়ারুল হক নান্না ডাক্তার, আব্দুর রউফ মাস্টার, ইদ্রিস মিয়া ও আব্দুস ছালাম মােল্যার উদ্যোগে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। রাজাকার কমান্ডার ও বিশিষ্ট রাজাকারদের মধ্যে নাসির মৌলভী, মওলানা আলী হায়দার (রাজাকার সংগঠক), আনু কাজি, আফতাব, হেমায়েত হিমু, সৈয়দ আলী খন্দকার, আব্দুস সাত্তার খান, আব্দুল হক মেম্বার, সেকান্দর মােল্যা, শুকুর মােল্যা, মানিক মােল্যা, জালাল কাজি, সােবাহান মিয়া, সেলিম মিয়া, ছরেজান মাস্টার (চর নােয়াপাড়া; সদস্য, মুসলিম লীগ, আলফাডাঙ্গা), আ. মালেক মাতুব্বর (সদস্য, মুসলিম লীগ, আলফাডাঙ্গা), ছালাম সরদার (সদস্য, মুসলিম লীগ, আলফাডাঙ্গা), মৌলভী নঈম মিয়া (সদস্য, মুসলিম লীগ, আলফাডাঙ্গা)-র নাম উল্লেখযােগ্য। পাকবাহিনী তাদের দোসর রাজাকারদের সহযােগিতায় আলফাডাঙ্গা বাজার ও গ্রাম, মালা, কুসুমদী, লাঙ্গুলিয়া, বায়শা, সেনেরডাঙ্গা, শিকারপুর, কুমুরতিয়া, টিটা, রাঘবপুর, ঘিদাহ, পানাইল, গােপালপুর বাজার ও গ্রাম, বানিয়াগাতি, কামারপুর, কুলধর, কৃষ্ণপুর প্রভৃতি গ্রামে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযােগ করে এবং ব্যাপক হত্যা ও গণহত্যা চালায়।
১১ই মে পাকবাহিনী রাজাকার কমান্ডার নাসির মৌলভীর প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় আলফাডাঙ্গা গ্রামে গণহত্যা চালায়। আলফাডাঙ্গা গণহত্যায় ১৭ জন গ্রামবাসীকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে। এদিন তারা আলফাডাঙ্গার সেনেরডাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে ঘরবাড়ি লুণ্ঠন শেষে পুরাে গ্রাম পুড়িয়ে দেয় এবং ২৭ জন নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে, যা সেনেরডাঙ্গা গণহত্যা নামে পরিচিত। এদিন পাকবাহিনীর আরাে একটি গ্রুপ রাজাকারদের সহযােগিতায় কুসুমদী গ্রামে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ ও গণহত্যা চালিয়ে নয়জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনা কুসুমদী গণহত্যা নামে খ্যাত (দেখুন কুসুমদী-সেনেরডাঙ্গা গণহত্যা)।
নাসির মৌলভীর নেতৃত্বে রাজাকার আনু কাজী ও সৈয়দ আলী খন্দকার মহিষারঘােপ গ্রামের দীনবন্ধু সাহা ও বারইপাড়া গ্রামের খেপু মাঝিকে গুলি করে হত্যা করে। নাসির বাহিনী মে মাসের শেষদিকে দিগনগর গ্রামের হৃদয়নাথ সরকারকে গুলি করে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করায় ১৭ই জুলাই বারইপাড়া গ্রামের ছাত্রনেতা আব্দুল মমিনকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনী ইছাপাশা গ্রামের ইউনুস আলীকে আগুনে পুড়িয়ে, টিটা গ্রামের সূর্য মিয়া ও আবুল খায়ের মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া পানাইল গ্রামের শামসুল হক, শিরগ্রামের আব্দুর রাজ্জাক খান ও পাচু মীর এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের সােলায়মান শিকদার, নুরু মিয়া ও ইসমাইল মল্লিক পাকবাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার হন।
আলফাডাঙ্গার লক্ষ্মীরাণী, আছিয়া বেগম, জায়েদা খাতুন ও জরিনা বেগমকে রাজাকারদের সহযােগিতায় পাকবাহিনী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়। টগরবন্দ গ্রামের সন্ধ্যারাণী ঘােষকে রাজাকার মুজিবর রহমান মজি তার বাড়িতে নিয়ে ১০ দিন আটকে রেখে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
আলফাডাঙ্গার ডাকবাংলাে নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতাে। রাজাকাররা ঝাটি গ্রামের পুলিন বিহারী ঘােষ, মহিষারঘােপের কার্তিক চন্দ্র সাহা, দিনেশ কর্মকার ও নকুল কর্মকারকে আলফাডাঙ্গার ডাকবাংলােতে ধরে নিয়ে সারারাত বেঁধে রাখে। পরদিন আশপাশের গ্রামের আরাে কয়েকজন হিন্দুকে ধরে এনে জোর করে কলেমা পড়িয়ে জোহরের নামাজ আদায় করিয়ে ছেড়ে দেয়। বিদ্যাধর গ্রামের মাজেদ মিয়া, গােপাল মােল্যা ও ছাদেক মােল্যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নেয়ার কারণে রাজাকার আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা মিয়ার নেতৃত্বে তার সহযােগীরা তাদের বেঁধে নির্যাতন করে।
মুক্তিযােদ্ধাদের ৪টি গ্রুপ- বাজড়া গ্রামের তবিবুর রহমান ও কওসার মল্লিকের গ্রুপ, কামার গ্রামের আক্কাস ও ইনায়েত সর্দারের গ্রুপ, খােলাবাড়ীয়া গ্রামের হাফিজউদ্দিনের গ্রুপ এবং কলিমাঝি গ্রামের আ. জলিলের গ্রুপ নিজেদের মধ্যে যােগাযােগ করে ১৪ই আগস্ট আলফাডাঙ্গা থানা আক্রমণ করে। ভাের সাড়ে ৫টায় ৪ গ্রুপের সদস্যরা থানার চারদিক থেকে গুলি বর্ষণ শুরু করলে ওসি আ. মােতালেব মেঘবানসহ থানায় অবস্থানরত পুলিশ সদস্য ও রাজাকাররা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর সবাই আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা থানা থেকে ৫টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, ৪টি মার্কফোর, ১টি টু-টু বাের রাইফেল, ১টি এসএমজি, ১টি ব্রেটাগান, ১টি পিস্তল, ২টি বন্দুক ও ৪ পেটি গােলা-বারুদ হস্তগত করেন।
৬ই সেপ্টেম্বর আলফাডাঙ্গার শিরগ্রামের কবরস্থানের পাশে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়, যা শিরগ্রাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। পক্ষান্তরে ৩ জন মুক্তিযােদ্ধা ও একজন পথচারী শহীদ হন। ১৭ই ডিসেম্বর আলফাডাঙ্গা উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ১৫ জন শহীদ মুক্তিযােদ্ধার নাম জানা যায়। তারা হলেন- মশিউর রহমান হেমায়েত (ছাত্র; পিতা আলতাফ হােসেন, মালা; ১৭ই ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধে শহীদ), তবিবুর রহমান টুকু (পিতা মাে. মচন তালুকদার, পানাইল; ১৫ই অক্টোবর ডামুড্যা যুদ্ধে শহীদ), আবুল হাসান মিয়া (পিতা মাে. রাহেন মিয়া, পানাইল, ১৭ই ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধে শহীদ), লিয়াকত আলী খান (ছাত্র; পিতা হেমায়েত উদ্দিন খান, পানাইল; ১৫ই অক্টোবর ডামুড্যাযুদ্ধে শহীদ), জাহাঙ্গীর হােসেন (পিতা বদন খান, চরডাঙ্গা; ১৭ই ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধে শহীদ), জাহিদুর রহমান (ছাত্র; পিতা শেখ সরওয়ার, কুমুরতিয়া; ১৫ই অক্টোবর ডামুড্যা যুদ্ধে শহীদ), ময়েন উদ্দিন (পিতা মাে. মােদাচ্ছের, পাড়াগ্রাম; ৯ই ডিসেম্বর করিমপুর যুদ্ধে শহীদ), আব্দুল হামিদ শেখ (পিতা কদম ব্যাপারী, খােলাবাড়িয়া; ৯ই ডিসেম্বর করিমপুর যুদ্ধে শহীদ), মিয়া শওকত হােসেন (ছাত্র; পিতা এম এ মান্নান, বীর বিক্রম, চন্দ্রা; যশােরের কালীগঞ্জ যুদ্ধে শহীদ), আবু জাফর খান (ছাত্র; পিতা বসারত খান, গােপালপুর; ৯ই ডিসেম্বর করিমপুর যুদ্ধে শহীদ), মঈন উদ্দিন (পিতা মানিক শেখ, টোনাপাড়া; ৯ই ডিসেম্বর করিমপুর যুদ্ধে শহীদ), আতিয়ার রহমান (পিতা আব্দুল আহেজ মােল্যা, টোনারচর; ৬ই সেপ্টেম্বর শিরগ্রাম যুদ্ধে শহীদ), নওশের আলী শেখ (পিতা আব্দুস সামাদ শেখ, কামারগ্রাম; ৩১শে অক্টোবর যশােরের তালবাড়ি যুদ্ধে শহীদ), শেখ শাহাবুদ্দিন (পিতা আলাউদ্দিন শেখ, কুমুরতিয়া; ১৫ই সেপ্টেম্বর ভেদরগঞ্জ যুদ্ধে শহীদ) এবং আব্দুস সামাদ (পিতা আব্দুর রহিম, কামারগ্রাম; মধুখালীর পুলম যুদ্ধে শহীদ)।
আলফাডাঙ্গার বারাশিয়া নদীর তীরে একটি স্থানের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চত্বর’। এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যশােরের কালীগঞ্জ যুদ্ধে শহীদ চন্দ্রা গ্রামের মুক্তিযােদ্ধা মিয়া শওকত হােসেনের নামে চন্দ্রা গ্রামে ‘শহীদ মিয়া শওকত হােসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০ই মে পাকবাহিনী কর্তৃক গণহত্যায় শহীদ মালা গ্রামের সমাজসেবক আসাদুজ্জামানের নামে ঐ গ্রামে শহীদ আসাদুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৭ই জুলাই রাজাকারদের গুলিতে নিহত বারইপাড়া গ্রামের ছাত্রনেতা শহীদ আব্দুল মমিনের নামে মহিষারঘােপ বাজারে ‘শহীদ মমিন স্মৃতিসংঘ’ নামে একটি ক্লাব স্থাপিত হয়েছে। [এ কে এম ফিরােজ আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড