You dont have javascript enabled! Please enable it! আমুট্ট গণকবর (আক্কেলপুর, জয়পুরহাট) - সংগ্রামের নোটবুক

আমুট্ট গণকবর

আমুট্ট গণকবর (আক্কেলপুর, জয়পুরহাট) জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার জয়পুরহাট-বদলগাছি সড়কের পাশে পশ্চিম আমুট্ট গ্রামে অবস্থিত। মুক্তিযােদ্ধাসহ এখানে অনেককে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়।
আক্কেলপুর উপজেলার সিনিয়র মাদ্রাসায় ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বড় ক্যাম্প। এ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির মেজর আফজাল। মাদ্রাসার বিভিন্ন কক্ষ ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র। হানাদাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ মানুষ ও মুক্তিযােদ্ধা সন্দেহে অনেককে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন শেষে হত্যা করত। হত্যার পর মৃতদেহগুলাে আশেপাশে মাটিচাপা দিত। হানাদারদের এ ঘাঁটি থেকে কয়েকশ গজ উত্তর-পশ্চিমে জয়পুরহাট-বদলগাছি সড়কের পাশে পশ্চিম আমুট্ট গ্রামে গণকবর রয়েছে। এখানে তরুণ মুক্তিযােদ্ধা গােলাম মােহাম্মদ পাইকার ওরফে খােকন (পিতা মােজাম পাইকার, বগুড়া)-কে হত্যা করে একটি গর্তে মাটিচাপা দেয়া হয়। এর পাশেই একটি গণকবরে মুক্তিযােদ্ধা প্রদীপ, সাধু, সুনীলসহ বেশ কয়েকজনকে কবর দেয়া হয়। একটি গণকবরে আবের জোয়ারদার, নবীর উদ্দিন, নজির প্রামাণিক, নসির প্রামাণিক, তাসের প্রামাণিক, ডা. বুল চান ও তােফাজ্জেল হােসেনের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়। এছাড়া আরাে কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা ও ৬ জন গারােয়ানকে হত্যা করে এ গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়।
১৫ই জুন ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে ২০ জন মুক্তিযােদ্ধা জয়পুরহাট সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ দলের একজন ছিলেন খােকন পাইকার। তাঁদের জয়পুরহাট থেকে বগুড়া পর্যন্ত এলাকায় অপারেশন পরিচালনার জন্য হানাদারদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়। আত্মরক্ষার জন্য তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল ২টি করে হ্যান্ড গ্রেনেড। সারারাত হেঁটে ভােররাত ৪টার দিকে তারা আক্কেলপুর থানার রােয়াইর গ্রামের মাঠের ভেতর দিয়ে সামনে এগােতে থাকেন। ঠিক তখনি এলাকার কয়েকজন সশস্ত্র রাজাকার- তাঁদের দেখে ফেলে এবং চিৎকার করে আরাে কিছু সশস্ত্র রাজাকারকে সেখানে জড়াে করে। মুক্তিযােদ্ধাদের ধরার জন্য ধাওয়া করলে আত্মরক্ষার জন্য তারা রাজাকারদের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকেন। জমিতে কাদা-পানি থাকায় গ্রেনেডগুলাে বিস্ফোরিত হওয়ায় রাজাকাররা ১৩ জন মুক্তিযােদ্ধাকে ধরে আক্কেলপুর হানাদার ক্যাম্পে সােপর্দ করে। সেখানে নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়। অবশিষ্ট ৭ জন মুক্তিযােদ্ধা দৌড়ে কানপুর গ্রামে আশ্রয় নেন। গ্রামের রাজাকাররা তাদের অবস্থান জানতে পেরে তাঁদেরও আটক করে পাকিস্তানি ক্যাম্পে হস্তান্তর করে। পাকিস্তানি সৈন্য এবং রাজাকাররা নির্যাতন শেষে তাদের হত্যা করে। হত্যার পর লাশগুলাে অন্যদের মতােই আমুট্ট গণকবরে মাটিচাপা দেয়। এছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে গমনকালে নিরপরাধ মানুষদের পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে এনে হত্যা করে এ গণকবরে মাটিচাপা দেয়। গণকবরটি ২০১৬ সালে বাঁধানাে হয়। গণকবরের প্রায় সকলেই অজ্ঞাতপরিচয়ধারী হওয়ায় কোনাে নামফলক বসানাে সম্ভব হয়নি। [মনিরুজ্জামান শাহীন ও রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড