আমুয়া-বাঁশবুনিয়া গণহত্যা
আমুয়া-বাঁশবুনিয়া গণহত্যা (কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি) সংঘটিত হয় ২৫শে মে। ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলায় আমুয়া-কাঁঠালিয়া সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে আমুয়া ও বাঁশবুনিয়া নামে দুটি গ্রাম অবস্থিত। পাকবাহিনী তাদের দোসর শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় এখানে গণহত্যা চালায়।
রাজনৈতিকভাবে সচেতন আমুয়া-বাঁশবুনিয়া গ্রামের মানুষ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে চলমান অসহযােগ আন্দোলন-এ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সে-সময় অমল দাসের নেতৃত্বে জেনারেল টিক্কা খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এলাকাটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। তাই যুদ্ধের সময় এ এলাকার মানুষ পাকবাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়।
২৫শে মে পাকবাহিনী বরিশাল থেকে গানবােটে কাঠালিয়ায় আসে। তারপর তারা এখানে গণহত্যা চালায়। কাঁঠালিয়া শান্তি কমিটির নেতা আজিজ মল্লিক ছিল এর অন্যতম পরিকল্পনাকারী। স্থানীয় রাজাকার রজ্জব আলী তালুকদার (ইউপি সদস্য, বাঁশবুনিয়া), কাদের গনি, ডাকাত ইসহাক প্রমুখ গণহত্যায় পাকবাহিনীকে সহায়তা করে। এতে ৪২ জন নারী-পুরুষ শহীদ হন।
গণহত্যায় শহীদরা হলেন- আমুয়ার তােফাজ্জল হােসেন রাজা মিয়া (পিতা হৈজন মীরবহর), রমণী চন্দ্র দাস (পিতা ধনকৃষ্ণ দাস), শিশু কুমার দাস (পিতা ধনকৃষ্ণ দাস), নিত্যানন্দ রজক দাস (পিতা গঙ্গাচরণ রজক দাস), জিতেন্দ্র নাথ (পিতা সখীচরণ নাথ), অমূল্য চন্দ্র নাথ (পিতা রামচন্দ্র নাথ), শ্রীহরি নাথ (পিতা সদানন্দ নাথ), সনাতন ঠাকুর (পিতা জগবন্ধু ঠাকুর), বাঁশবুনিয়ার দেবেন্দ্র নাথ দাস (পিতা গােপাল গােবিন্দ দাস), হরেন্দ্র নাথ দাস (পিতা ললিত কুমার দাস), সুকুমার দত্ত (পিতা বসন্ত দত্ত), অম্বিকা চরণ নাথ (পিতা সখীচরণ নাথ), সম্ভু চরণ নাথ (পিতা রাজ চন্দ্র নাথ), বাবুরাম মালাকার (পিতা গােবিন্দ মালাকার), পরেশ চন্দ্র বালা (পিতা বসন্ত বালা), অনন্ত কুমার হালদার (পিতা বাণীরাম হালদার), সূর্যকান্ত মণ্ডল (পিতা গিরীশ চন্দ্র মণ্ডল), কালীকান্ত মণ্ডল (পিতা গিরীশ চন্দ্র মণ্ডল), প্রফুল্ল হালদার (পিতা বসন্ত হালদার), কাশীশ্বর শীল (পিতা সারদা শীল), রাজা শীল (পিতা কাশ্মীশ্বর শীল), নারায়ণ হালদার (পিতা উদয় চন্দ্র হালদার), বিশ্বেশ্বর হালদার (পিতা উদয় চন্দ্র হালদার), যজ্ঞেশ্বর হালদার (পিতা উদয় চন্দ্র হালদার), শ্যামকান্ত হালদার (পিতা জগবন্ধু হালদার), গণেশ চন্দ্র হালদার (পিতা জগবন্ধু হালদার), মায়া রানী (পিতা গণেশ চন্দ্র), গঙ্গা চরণ মাঝি (পিতা অশ্বিনী কুমার মাঝি), সূর্যকান্ত মাঝি (পিতা গঙ্গা চরণ মাঝি), রাম কানাই মিস্ত্রী (পিতা হরচন্দ্র মিস্ত্রী), সুধারাম মিস্ত্রী (পিতা প্রফুল্ল মিস্ত্রী), হরেন্দ্র নাথ মিস্ত্রী (পিতা চন্দ্র কুমার মিস্ত্রী), কৈলাশ চন্দ্র দাস (পিতা ভঙ্গ চন্দ্র দাস), হাতেম মাঝি (পিতা আব্দুল মাঝি), হাসেম মাঝি (পিতা গগন মাঝি), আফজাল হােসেন (পিতা মাে. তালেব আলী মুন্সী), হাতেম হাজী (পিতা মাে. ছফের উদ্দিন আকন), আ. বাকের হাওলাদার (পিতা ছােট হাওলাদার), ছােনাউটার গণেশ চন্দ্র রায় (পিতা অনন্ত কুমার রায়), অনন্ত কুমার রায় (পিতা কৃষ্ণকান্ত রায়), মহেন্দ্র নাথ (পিতা মধুসূদন নাথ) ও গােপাল চন্দ্র নাথ (পিতা মহেন্দ্র নাথ)।
গণহত্যার পাশাপাশি পাকবাহিনী এখানে নারীনির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযােগ করে। তাদের হাতে ধর্ষিত হন ঝালকাঠি থেকে আত্মীয়ের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়া অর্চনা ও সবিতা। গণহত্যার পর লাশগুলাে এলাকাবাসী একত্রিত করে তালতলা ব্রিজের পাশে বাঁশবুনিয়া হাইস্কুলের সামনে গণকবর দেয়। ২০১২ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড