You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম আরব আলী - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম আরব আলী

আরব আলী, বীর বিক্রম (১৯৩৪-১৯৯৫) হাবিলদার, মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতােভয় সৈনিক ও কোম্পানি কমান্ডার। তিনি ১৯৩৪ সালের ১লা জুলাই সিলেট জেলার
দক্ষিণ সুরমা উপজেলাস্থ লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত লতিফপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম হারিছা বিবি এবং পিতার নাম মােহাম্মদ আলী।
আরব আলী ইপিআর বাহিনীতে হাবিলদার পদে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে তিনি দিনাজপুর অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন। ৭১-এর ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর বর্বরােচিত হামলা শুরু করলে ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিয়ে তিনি প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৭শে মার্চ দিনাজপুর কুটিবাড়ি ইপিআর ডেহকোয়ার্টার্সে হামলা চালিয়ে বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে। আরব আলী তখন এর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলেন। ২৯শে মার্চ তিনি ভাইগর বিওপিতে অবস্থানরত একজন অবাঙালি হাবিলদার এবং একজন নায়েককে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর তিনি রুরাণী বিওপির দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে অবস্থানরত একজন পাঞ্জাবি হাবিলদার এবং একজন সিপাইকে বন্দি করতে সক্ষম হন। পরে তিনি রাণীনগর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে গিয়ে একজন পাঞ্জাবি ল্যান্স নায়েককে হত্যা ও একজন সিপাইকে বন্দি করেন। আরব আলীর নেতৃত্বে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়। তাতে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত, একজন সিগন্যালম্যান আটক এবং কয়েকটি গাড়িসহ বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। ১০ই এপ্রিল পাকবাহিনীর দোসর বিহারিরা পার্বতীপুরের আশপাশের গ্রামগুলােতে হামলা চালিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীদের হত্যা করে। এরূপ অবস্থায় গ্রামবাসীদের সহযােগিতায় আরব আলী বিহারিদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে অনেককে হত্যা করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও সাফল্যের জন্য তাঁকে একাধিক কোম্পানির কমান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরব আলী-কে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম বদরুন নেসা। ১৯৯৫ সালের ৮ই জানুয়ারি এ বীর মুক্তিযােদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড