আমবাগান যুদ্ধ
আমবাগান যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৪ই অক্টোবর ও ২১শে অক্টোবর দু-দফায়। যুদ্ধের স্থানটি শিবগঞ্জ উপজেলার সােনামসজিগ সংলগ্ন। ৬ই অক্টোবর পাকবাহিনী কলাবাড়ি-ধােবড়া আক্রমণ করে দখল করে নেয়। এ-সময় যথেষ্ট জনবল ও অস্ত্র না থাকায় মুক্তিযােদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করে সীমান্তবর্তী স্থানে চলে যান। এর মাত্র কয়েক দিন পূর্বে মেহেদিপুর সাব-সেক্টরে এসে যােগ দেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ। তিনি আমবাগানে ডিফেন্স গড়ে তােলার জন্য ১৪ই অক্টোবর দুপ্লাটুন মুক্তিযােদ্ধা প্রেরণ করেন। তারা এখানে এসে প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পূর্বেই পাকসেনারা তাদের আক্রমণ করে। মুক্তিযােদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। এযুদ্ধের খবর শুনে মাে. মহসিন আলী বালিয়াদিঘি থেকে তাঁর প্লাটুন নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসেন। এবং পশ্চিম দিক থেকে পাকসেনাদের আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় হয়। এতে দুজন পাকসেনা নিহত হয়। এক পর্যায়ে কৌশলগত কারণে মুক্তিযােদ্ধারা বালিয়াদিঘির দিকে সরে যান। ক্রুদ্ধ পাকসেনারা সালামপুর গ্রামে প্রবেশ করে ৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং তারপর তারা ধােবড়া ফিরে যায়।
এর এক সপ্তাহ পর মুক্তিযােদ্ধারা পুনরায় আমবাগানে শক্ত অবস্থান নেন এবং একদিন পরেই পাকসেনারা তাঁদের আক্রমণ করে। এবার মুক্তিযােদ্ধারা সফলতার সঙ্গে শত্রুর মােকেবেলা করেন। যুদ্ধে ৭-৮জন পাকসেনা নিহত হয়। এতে মনােবল হারিয়ে পাকসেনারা পিছু হটতে থাকে। এ খবর পেয়ে কলাবাড়ি-ধােবড়া ডিফেন্সের পাককমান্ডার ক্যাপ্টেন শরীফ আহমদ তাদের সাহায্যার্থে কিছু সৈন্য প্রেরণ করে। এ পাকসেনারা টাকসাল দিঘির কাছাকাছি পৌছে শক্ত অবস্থান নেয় এবং সেখানে তারা যৌথভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ করে। এ-যুদ্ধে ৮-১০ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন। এক পর্যায়ে পাকসেনারা পশ্চাদপসরণ করে ধােবড়া চলে যায় এবং মুক্তিযােদ্ধারা আমবাগানে ফিরে আসেন। [তামিজ উদ্দীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড