You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম আমান উল্লাহ কবির

আমান উল্লাহ কবির, বীর বিক্রম (১৯৪৫-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী ইউনিয়নের কুনা মালঞ্চ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আহাম্মদ আলী সরকার, মাতার নাম হালিমা খাতুন। ৩ ভাই ও ৫ বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তিনি মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকার একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এইচএসসি পাস করে তিনি সিলেটের ছাতকে পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের চাকরিতে যােগদান করেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভের পরও পকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে গােপনে পূর্ব বাংলায় সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে আসতে থাকে। এতে আমান উল্লাহ কবির প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে এবং ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। মে মাসের প্রথমদিকে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে স্ত্রী ফিরােজা খানম, ৩ বছরের মেয়ে আয়শা কবির এবং নবজাতক পুত্র আল আমীনকে শ্বশুরালয়ে রেখে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একই মাসের মাঝামাঝি তিনি ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে এবং কোম্পানি কমান্ডার আলতাফ উদ্দিনের অধীনে যুদ্ধ করেন। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের পরিচয় দেন। এসব যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগী এদেশীয় রাজাকার, আলবদরদের প্রভূত ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হন। তার অনেকগুলাে যুদ্ধের মধ্যে জামালপুর জেলার কামালপুরে পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটি আক্রমণ ছিল সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম কামালপুর। মুক্তিযুদ্ধকালে এ গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানকার প্রতিরক্ষায় নিয়ােজিত ছিল তাদের ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের একটি দল, বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার্স, ইপিসিএএফ ও রাজাকাররা। পাকিস্তানি বাহিনী এখানে অবস্থান নেয়ার পর প্রায়দিনই মুক্তিযােদ্ধারা কামালপুর, ধানুয়া, উঠানিপাড়া, ঘাসিরগাঁও, পালবাড়ী, বক্সপাড়া, মাঝিরচর প্রভৃতি জায়গার পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ই সেপ্টেম্বর সুবেদার মুনসুরের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযােদ্ধার একটি দল আকস্মিকভাবে কামালপুর আক্রমণ করে। এ দলে আমান উল্লাহ কবিরও ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের হালকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই হানাদারদের মােকাবেলা করতে থাকেন। হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে মাঝে-মাঝে আলাে জ্বেলে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান চিহ্নিত করত। এরপর তারা মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর মেশিনগানের গােলাবর্ষণ করত। অনেক মুক্তিযােদ্ধা এতে পিছু হটলেও আমান উল্লাহ কবিরসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা বীরত্বের সঙ্গে ঐদিন লড়াই চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে আমান উল্লাহ কবির গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। এ যুদ্ধে আরাে ৭-৮ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস, বীরত্বপূর্ণ অবদান ও আত্মােৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আমান উল্লাহ কবিরকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। [রীতা ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!