You dont have javascript enabled! Please enable it!

আমগ্রাম ব্রিজ যুদ্ধ

আমগ্রাম ব্রিজ যুদ্ধ (রাজৈর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় দুবার। প্রথম যুদ্ধ ১৩ই নভেম্বর ও দ্বিতীয় যুদ্ধ ২১শে নভেম্বর হয়। প্রথম যুদ্ধে ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধে পাকবাহিনী অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লক্ষ্যস্থলে পৌছাতে ব্যর্থ হয়।
মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট-মস্তফাপুর সড়কে অবস্থিত আমগ্রাম ব্রিজ মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। এখানে মুক্তিযােদ্ধা ও পাকসেনারাজাকারদের মধ্যে নিয়মিত গুলি বিনিময় হতাে। রাজৈর থানার মুক্তিযােদ্ধারা সাধারণ মানুষের প্রাণহানি এড়াতে পাকিস্তানি সেনা কনভয় প্রতিরােধের জন্য জনবসতিহীন এ ব্রিজটিকে রণক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। পাখুল্লা ও গয়লা গ্রামে মুক্তিযােদ্ধাদের দুটি বড় ক্যাম্প ছিল। আমগ্রাম ব্রিজের পাশ দিয়ে খালপাড়ের রাস্তা ধরে এ দুই গ্রামে যেতে হতাে। মুক্তিযােদ্ধাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্রিজ সর্বদা শত্রুমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা হামলার ভয়ে রাতের বেলা পাকসেনারা চলাচল করত না। রাতে তাই এ ব্রিজ দিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের অবাধ বিচরণ চলত। সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানি সেনারা এখানে ২৪ ঘণ্টা রাজাকার-প্রহরা বসায়। ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের অবাধ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এ কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিরাতে গুলি চালিয়ে ব্রিজে প্রহরারত রাজাকারদের সন্ত্রস্ত করে রাখা হতাে, যাতে তারা বাংকারের বাইরে বের হতে সাহস না পায়। ১৪ই আগস্ট মুক্তিযােদ্ধারা সারা মাদারীপুরে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেন। কালকিনি থানার শিকারমঙ্গলের মুক্তিযােদ্ধা সালাউদ্দিন মাণিকের নেতৃত্বে একটি বিস্ফোরক দল আমগ্রাম ব্রিজের আংশিক উড়িয়ে দেয়।
১৩ই নভেম্বর রাতে সংঘটিত যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন শেখ সেকান্দর আলী। আবদুল কাইয়ুম মীরের অধীনে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল আমগ্রামের গয়লাবাড়িতে। পাখুল্লার সুনীল গাইড়ার বাড়ির ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল কাদের মােল্লা। গয়লাবাড়ির পর বিল ও ধানক্ষেত ছিল। গয়লাবাড়ি ক্যাম্প থেকে কমান্ডার শেখ সেকান্দার আলীর অধীনে মুক্তিযােদ্ধা রুস্তম সরদারসহ ৬ জন মুক্তিযােদ্ধা ১৩ই নভেম্বরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাতের বেলা রাজাকারদের প্রহরা থাকায় তারা পুরনাে ভাঙ্গা একটি কবরের মধ্যে বসে সারারাত সুযােগের অপেক্ষায় থাকেন। ফজরের আজানের পর রাজাকাররা প্রহরা ত্যাগ করে বাংকার থেকে উঠে আসে। মুক্তিযােদ্ধাদের হাতিয়ারের রেঞ্জের মুখে আসতেই ব্রাশফায়ার করা হয়। এতে ৩ জন রাজাকার প্রাণ হারায়। অন্যরা বাংকারের মধ্যে থেকে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। মুক্তিযােদ্ধারা আর বিলম্ব না করে ক্যাম্পে ফিরে যান।
১৯শে নভেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা রাজৈর থানা আক্রমণ করেন। টেকেরহাট ক্যাম্প এবং মাদারীপুর এ আর হাওলাদার মিলের ক্যাম্প থেকে পাকসেনারা এসে যাতে সাহায্য করতে না পারে, সেজন্য রাজৈর-টেকেরহাট সড়কের বৈলগ্রাম ব্রিজ এবং রাজৈর-মাদারীপুর সড়কের আমগ্রাম ব্রিজে এম্বুশ করা হয়। আমগ্রাম ব্রিজের এম্বুশে নেতৃত্ব দেন শেখ সেকান্দার আলী ও আবদুল লতিফ বাওয়ালী। কিন্তু বৈলগ্রাম ব্রিজে পাকসেনাদের আক্রান্ত হওয়ার খবরে মাদারীপুর থেকে পাকসেনাদের একটি দল অগ্রসর হতে থাকে। তারা আমগ্রাম ব্রিজের অনেক আগে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গুলি করতে-করতে অগ্রসর হয়। মুক্তিযােদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়লে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। ভােরে আলাে ফুটে ওঠায় মুক্তিযােদ্ধারা পজিশন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা আমগ্রাম ব্রিজ পাড় হয়। এ যুদ্ধের ফলে মাদারীপুর থেকে আসা পাকসেনাদের রাজৈর পৌছাতে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্য সফল হয়। [শেখ নাছিমা রহমান]।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!