You dont have javascript enabled! Please enable it!

আমতলী থানা দখলের যুদ্ধ

আমতলী থানা দখলের যুদ্ধ (আমতলী, বরগুনা) সংঘটিত হয় ১৩ই ডিসেম্বর। এতে থানায় অবস্থানরত ওসি, পুলিশ, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা অত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা ১৪টি রাইফেল ও শতাধিক রাউন্ড গুলি হস্তগত করেন এবং থানাসহ অমতলী উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
আমতলী উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় মসজিদের পূর্ব পাশে আমতলী থানা অবস্থিত। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ১৪ জন পুলিশ থানায় অবস্থান করছিল। তাদের সাহায্যকারী ও পরামর্শদাতা হিসেবে স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা সব সময় থানায় যাওয়া-আসা করত। ওসি রইছ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং পুলিশ সদস্যেদের অত্যাচারে আমতলীর মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তাদের অত্যাচারের জবাব দিতে ও আমতলী হানাদারমুক্ত করতে আমতলীর মুক্তিযােদ্ধারা থানা দখলের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী অল্প সংখ্যক অস্ত্র নিয়ে সুবেদার হাতেম আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধরা প্রস্তুতি নেন। এ-সময় নিজামউদ্দিন তালুকদার ও মঈনউদ্দিন তালুকদারের অনুরােধে গলাচিপা থানা মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রব ও কলাপাড়ার ফেরদৌস হায়দার বুকাবুনিয়া সাব-ক্যাম্প থেকে ভারী অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে আমতলী থানা দখলের যুদ্ধে অংশ নেন। আমতলী, গলাচিপা ও কলাপাড়ার মুক্তিযােদ্ধারা এ-যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য নৌকাযােগে ও পায়ে হেঁটে আমড়াগাছিয়া ও সাহেব বাড়ি হয়ে কুকুয়ার সােহরাওয়ার্দী স্কুলে মিলিত হন। এদিকে মুক্তিযােদ্ধাদের সম্ভাব্য থানা আক্রমণের ইঙ্গিত পেয়ে ওসি রইছ উদ্দিন ভূঁইয়া আমতলী এ কে স্কুলের শিক্ষক আমির হােসেন গাজী ও দলিল উদ্দিন মৃধার মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠায়। এটা কোনাে চাল হতে পারে ভেবে মুক্তিযােদ্ধারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধারা ১৩ই ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে নিজামউদ্দিন তালুকদার, নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ও আফাজ উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করতে এগিয়ে আসেন। তারা থানার অপর পাড়ে এ কে স্কুলে ঘাঁটি স্থাপন করে নদীর তীর ঘেঁষে পজিশন নেন। এ-সময় মুক্তিযােদ্ধা ফেরদৌস হায়দার (কলাপাড়া) গ্রেনেড হাতে নিয়ে কলাগাছে করে নদী পার হয়ে থানা এলাকায় প্রবেশ করে গ্রেনেড চার্জ করেন। গ্রেনেডের শব্দে মুহূর্তের মধ্যে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। থানায় অবস্থানরত পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা এক হয়ে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গােলাগুলির মাঝখানে পড়ে একজন নৌকার মাঝি শহীদ হন। দীর্ঘ সময় ধরে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি গােলাবর্ষণ চলে। সকাল হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে চারদিক থেকে মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে থানার দিকে আসতে থাকে। এতে রাজাকার ও পুলিশ বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ওসি রইছ উদ্দিন ভূঁইয়া পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলে মুক্তিযােদ্ধারা গুলি বন্ধ করে বীরদর্পে থানায় প্রবেশ করে সবাইকে বন্দি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১৪টি রাইফেল ও শতাধিক রাউন্ড গুলি মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। ওসি রইছ উদ্দিন ভূঁইয়া, সিআই আনােয়ার হেসেন ও রাজাকার কমান্ডার মুসাইকে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়। থানার অন্তর্বর্তীকালীন নতুন ওসির দায়িত্ব দেয়া হয় মুক্তিযােদ্ধা নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদারকে। এভাবে ১৩ই ডিসেম্বর থানা দখলের মধ্য দিয়ে আমতলী উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [এম এ হালিম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!