You dont have javascript enabled! Please enable it! আমবাগান নির্যাতনকেন্দ্র (চট্টগ্রাম মহানগর) - সংগ্রামের নোটবুক

আমবাগান নির্যাতনকেন্দ্র

আমবাগান নির্যাতনকেন্দ্র (চট্টগ্রাম মহানগর) চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কাছে অবস্থিত ছিল। অবাঙালিদের মধ্যে ‘মেজর সাহাব’ নামে পরিচিত কুখ্যাত বিহারি সন্ত্রাসী আনােয়ারের নেতৃত্বে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আনােয়ার কোনাে চাকরিজীবী ছিল না, ছিল ঝাউতলা বাজারের কসাই। সে এখানে একটি বাহিনী গড়ে তুলে পাকবাহিনীর সহায়তায় এলাকায় সব ধরনের অপকর্ম পরিচালনা করত। তারা আমবাগান, ঝাউতলা, টাইগারপাস এবং সর্দার বাহাদুর নগর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লােকদের ওপর নজর রাখা, তাদের নির্যাতন করা এবং হত্যাযজ্ঞ চালানাে। টাইগারপাস বখতেয়ার নৌঘাঁটির নৌবাহিনীর সদস্যরা এখানে মাঝেমধ্যে আসত। তারা আনােয়ার বাহিনীকে বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের কৌশল শিখিয়ে দিত। আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রশিক্ষণ দিত। পাকসেনারাও মাঝে-মধ্যে এসে প্রশিক্ষণ দিত।
আনােয়ার আমবাগান রেলওয়ে ওয়ার্কশপের বড়কর্তাদের অফিস দখল করে নিজের অফিস খুলেছিল। তার প্রভাব এতই বেশি ছিল যে, সে অফিসের বাঙালি কর্মকর্তাদের তার কক্ষে ঝাড় দিতে বাধ্য করত। তার এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রায় সকল বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীই এক সময় অফিস ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
প্রতি সন্ধ্যায় আনােয়ারের টেবিলে টাকার স্কুপ জমা হতাে। বিশেষ একটি বক্সে জমা হতাে স্বর্ণ। তখন অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর দখল করেছে আনােয়ার বাহিনী। তাদের সম্পদে অল্পদিনেই আনােয়ার বিশাল সম্পদের মালিক হয়ে যায়। নিকটস্থ একটি পাহাড়ের ওপর আনােয়ার গড়ে তােলে নারীনির্যাতনের একটি বিশেষ কক্ষ। প্রতিদিন সেখানে মদের আসর বসত এবং বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করা হতাে। সেখানে কত নারী যে সম্ভ্রম হারিছে তার হিসেব নেই। আমতলায় অসংখ্য মানুষকে শারীরিক নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমদিকে আনােয়ার ও তার বাহিনী মানুষ হত্যা করে পাহাড়ে পুঁতে ফেলত। পরে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সেগুলাে রেলের ট্রলিতে করে ফয়স লেক বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হতাে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই আনােয়ার এক রাতে খুন হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমবাগান রেল লাইনের পাশের পানির ট্যাংক থেকে আনােয়ার বাহিনীর হত্যার শিকার অসংখ্য মানুষের লাশ মুক্তিযােদ্ধারা উদ্ধার করেন। বিশাল এই ট্যাংক ১৯৭১-এর একটি গণকবর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। [সাখাওয়াত হােসেন মজনু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড