বীর উত্তম আব্দুস সাত্তার হাওলাদার
আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, বীর উত্তম (জন্ম ১৯৪৫) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ১০ই অক্টোবর বরিশাল জেলার সদর উপজেলার গনপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রহমত আলী হাওলাদার এবং মাতার নাম আমেনা খাতুন। তিনি দুই কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রেহেনা পারভীন।
আব্দুস সাত্তার বরিশালের কাশীপুর হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৬ সালের ১২ই আগস্ট তৎকালীন ইপিআর বাহিনীতে যােগদান করেন। ঢাকার পিলখানা ইপিআর সদর দফতর থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে রাজশাহী সেক্টরে পদায়ন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি সিপাহি পদে নওগাঁ বর্ডার এলাকায় ইপিআর ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্বরােচিত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতন শুরু করলে তিনি তার ইউনিটের বাঙালি সদস্যদের নিয়ে বিদ্রোহ করে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। সান্তাহারসহ বৃহত্তর রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে তিনি বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরােধ যুদ্ধ শেষে তিনি ভারত গমন করেন। তখন তাঁকে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে নিয়মিত বাহিনী নিয়ে ব্রিগেড হিসেবে ‘জেড’ ফোর্স গঠন করা হলে তিনি ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর কমান্ডার অফিসার মেজর শাফায়াত জামিল, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে পুনরায় যুদ্ধে যােগদান করেন। অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে তিনি কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর কোদালকাঠি, ময়মনসিংহের ধানুয়াকামালপুর, সিলেটের গােয়াইনঘাট, ছাতক, টেংরাটিলা, গােবিন্দগঞ্জ প্রভৃতি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে কোদালকাঠি যুদ্ধ ও গােয়াইনঘাট যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। ১৩ই আগস্ট বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা গানবােট, লঞ্চ ও বার্জ নিয়ে তাদের কোদালকাঠি ঘাঁটি থেকে রৌমারী থানা সদরের দিকে অগ্রসর হয়। আব্দুস সাত্তারের দল ও অন্যদল মিলে পথিমধ্যে শত্রুসেনাদের ওপর একযােগে আক্রমণ করে। শত্রুসেনারা মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে তাদের কোদালকাঠি ঘাঁটিতে ফিরে যায়। সহমুক্তিযােদ্ধা তরিকুলকে সঙ্গে নিয়ে আব্দুস সাত্তার গভীর রাতে নদী সাঁতরে পাকিস্তানি সেনাদের নােঙ্গর করা গানবােট, লঞ্চ ও বার্জে মাইন বিস্ফোরণ করে ধ্বংস করেন। এ ঘটনা দেশেবিদেশে বিপুল আলােড়ন সৃষ্টি করে।
২৩শে অক্টোবর আব্দুস সাত্তার ও তাঁর দলের মুক্তিযােদ্ধারা সিলেটের গােয়াইনঘাটে অবস্থিত পাকিস্তান বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ শুরু করার পূর্বেই শত্রুসৈন্যরা টের পেয়ে তাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ এবং আব্দুস সাত্তার আহত হন। মুক্তিযােদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভারতে পাঠান। পরবর্তীতে শিলং ও পুনে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার হাবিলদার আব্দুস সাত্তার হাওলাদারকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৬, খেতাবের সনদ নং ৩৯)। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড