বীর প্রতীক আব্দুস সামাদ
আব্দুস সামাদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪০) পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতােভয় সৈনিক। তিনি ১৯৪০ সালের ১২ই ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলে পারিবারিকভাবে তারা রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। তাঁর পিতার নাম এম এ শাকুর ও মাতার নাম সালিমা খাতুন। তিনি ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যােগদান করেন।
৭১-এর ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতনে মেতে উঠলে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রত্যয় নিয়ে আব্দুস সামাদ মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। তিনি ২নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ক্র্যাক প্লাটুন নামে মুক্তিযােদ্ধাদের যে দলটি ঢাকায় বেশ কয়েকটি দুঃসাহসিক গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করে, সে- দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন আব্দুস সামাদ। তাদের বিভিন্ন অপারেশনের মধ্যে শাহবাগস্থ হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল অপারেশন অন্যতম। অপারেশনের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন আব্দুস সামাদ ও আবু বকর। তারা দলের সদস্য মােফাজ্জল হােসেন চৌধুরী মায়া ও গাজী গােলাম দস্তগীরকে সঙ্গে নিয়ে হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ইতঃপূর্বে ইন্টারকন্টিনেন্টালের শপিং আর্কেডের কয়েকটি দোকানের নিয়নসাইন সংযােজনের কাজ করেছিলেন আব্দুস সামাদ। সে-সূত্রে তিনি খবর পান যে, সেখানে অবস্থিত থাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের অফিসটি হােটেলের ছােট একটি কক্ষে স্থানান্তরিত হবে। এ সুযােগ কাজে লাগিয়ে থাই এয়ারলাইনস থেকে অত্যন্ত কম মজুরিতে ডেকোরেশনের কাজ নিয়ে সামাদ তা সম্পন্ন করেন। এ কাজের ফাঁকে তিনি হােটেলটি ভালভাবে রেকি করেন। ১১ই আগস্ট বিকেলে একটি ব্রিফকেসে ২৮ পাউন্ড পিকে ও ৫৫ মিনিট মেয়াদি টাইমবােম সাজিয়ে আব্দুস সামাদ সঙ্গীদের নিয়ে একটি গাড়িতে করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। পার্কিংয়ে পৌছে ব্রিফকেস নিয়ে আব্দুস সামাদ ও আবু বকর সতর্কতার সঙ্গে হােটেল লাউঞ্জের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে সুইস এয়ারের অফিস কক্ষের দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। মায়া ও গাজী স্ট্যান্ডগান নিয়ে তাদের ফেরার অপেক্ষায় গাড়িতে বসে থাকেন।
আব্দুস সামাদ ও আবু বকর ব্রিফকেসসহ সােজা প্রসাধন কক্ষের একেবারে কোনার একটি কক্ষে প্রবেশ করে দ্রুত টাইমবােম সেট করে ব্রিফকেসটি সেখানেই রেখে দেয়াল টপকে পার্কিং-এ এসে দ্রুত হােটেল থেকে বেরিয়ে যান। ঠিক ৫৫ মিনিট পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটলে হােটেলের লাউঞ্জ, শপিং আর্কেড় ও আশপাশের কক্ষের কাচ টুকরাে-টুকরাে হয়ে ভেঙ্গে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। দুঃসাহসিক এ অপারেশনের সংবাদ গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আব্দুস সামাদকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শাহীন সামাদ। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড