সুবেদার ও শহীদ মুক্তিযােদ্ধা বীর প্রতীক আব্দুল মােমিন
আব্দুল মােমিন, বীর প্রতীক (১৯৩০-১৯৭২) সুবেদার ও একজন দেশপ্রেমিক শহীদ মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩০ সালের ১লা জুন চাঁদপুরের কামরাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী হায়দার আলী মুন্সি এবং মাতার নাম নয়াবজান বিবি। ষাটের দশকের প্রথম দিকে আব্দুল মােমিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যােগ দেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তিনি ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাকভারত যুদ্ধে অংশ নেন। চাকরি জীবনে তিনি সুবেদার পদে উন্নীত হন। ৭১ সালে তিনি ঢাকার জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি সৈনিক ও নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে ২য় বেঙ্গলের অন্যান্য সৈনিকদের সঙ্গে বিদ্রোহ করেন। পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের হত্যা করে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যান্টেনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। আব্দুল মােমিন ভৈরব, মধুপুর গড়, কালীহাতি পুল, জামরকীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৩ নম্বর সেক্টর এবং পরে ‘এস’ ফোর্সের অধীনে মেজর মইনুল হােসেন চৌধুরীর কমান্ডে যুদ্ধ করেন।
আব্দুল মােমিন ঢাকার জয়দেবপুর, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হলেও বিহারিদের ছত্রছায়ায় ঢাকার মিরপুর ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি পর্যন্ত শত্রু কবলিত ছিল। মিরপুর থেকে পাকিস্তানি শত্রুসেনাদের হটিয়ে তা দখলমুক্ত করতে দায়িত্ব দিয়ে একদল সেনাসদস্য ও অন্যান্য ফোর্স প্রেরণ করা হয়। আব্দুল মােমিনও এদলে ছিলেন। শত্রুর ছােড়া বুলেটে তিনি শহীদ হন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মােৎসর্গ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আব্দুল মােমিনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আমেনা খাতুন। ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড