মুক্তিযুদ্ধের অকুতােভয় সৈনিক বীর প্রতীক আব্দুল লতিফ
আব্দুল লতিফ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৪) মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতােভয় সৈনিক। ১৯৪৪ সালের ১৯শে জুলাই বরিশাল জেলার পশ্চিম কাউনিয়ার সুমন ভিলায় তার জন্ম। তাঁর পিতা তােলফে আলী মজুমদার এবং মাতা সখিনা খাতুন।
আব্দুল লতিফ ষাটের দশকের প্রথম দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যােগ দেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তিনি ১ম ইস্ট বেঙ্গলে নিয়ােগ লাভ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নেন। চাকরি জীবনে। তিনি নায়েক সুবেদার পদে উন্নীত হন। ৭১ সালের ২৫শে মার্চ তিনি রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল রেজাউল জলিলের নেতৃত্বে যশােরের চৌগাছায় শীতকালীন মহড়ায় নিয়ােজিত ছিলেন। ২৯শে মার্চ এ রেজিমেন্টকে যশাের ক্যান্টনমেন্টে এনে নিরস্ত্র করে রাখা হয়। পরদিন সকালে দরবার হলে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালি সৈনিকদের হত্যার পরিকল্পনা করে। এটি বুঝতে পেরে বাঙালি সৈনিকরা অস্ত্রভাণ্ডার ভেঙ্গে অস্ত্র নিতে উদ্যত হলে পাকসেনারা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের গুলিবর্ষণের মুখে আব্দুল লতিফ অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন।
এক পর্যায়ে তারা বেনাপােল চলে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে তিনি গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া যশাের জেলার চৌগাছায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। আব্দুল লতিফ পরবর্তীতে ‘জেড’ ফোর্সে যােগ দেন। তিনি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে জামালপুরের ধানুয়া-কামালপুর ও কোদালকাঠি, সিলেটের ঢালাই, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও শমসের নগর, রংপুর জেলার রৌমারী, ভুরুঙ্গামারী ও নীলফামারী প্রভৃতি স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এসবের মধ্যে ধানুয়া-কামালপুর ও কোদালকাঠি যুদ্ধে তিনি অসামান্য বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আব্দুল লতিফকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন পদমর্যাদা লাভ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নূরজাহান বেগম। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড