You dont have javascript enabled! Please enable it! লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও যুদ্ধাহত মুক্তিযােদ্ধা বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান - সংগ্রামের নোটবুক

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও যুদ্ধাহত মুক্তিযােদ্ধা বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান

আব্দুল মান্নান, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৫) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালে ময়মনসিংহ জেলা সদরের সুতিয়াখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম রওশন আরা এবং পিতার নাম আফতাব উদ্দিন আহমেদ।
আব্দুল মান্নান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনি ১৯৬৮ সালে কাকুলস্থ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ২৩তম শর্ট কোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যােগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে যােগ দেন। ৭১-এর মার্চ মাসে তিনি রেজিমেন্টের ‘সি’ কোম্পানির কমান্ডার মেজর নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে ময়মনসিংহের খাগদহ এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ২৭শে মার্চ রাতে সিএন্ডবি রেস্ট হাউসে অবস্থানকালে পাকবাহিনী সেখানে আক্রমণ করলে তিনি কৌশলে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সক্ষম হন। এরপর মেজর সফিউল্লাহ ২য় বেঙ্গলের সেনাসদস্যদের নিয়ে জয়দেবপুর থেকে সেখানে এলে তাঁর সঙ্গে তিনি ময়মনসিংহে যান এবং বিভিন্ন প্রতিরােধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পুনর্গঠিত হলে তিনি তাতে যােগ দিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশ নেন।
৩১শে জুলাই ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজের নেতৃত্বে বিখ্যাত ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের তাড়া করে তাদের ক্যাম্প এলাকায় প্রবেশ করে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে এক পর্যায়ে আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে গৌহাটি হাসপাতালে নেয়া হয় এবং চিকিৎসা শেষে তিনি পুনরায় নিজ রেজিমেন্টে ফিরে ২ নম্বর সাব-সেক্টর এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আব্দুল মান্নান সহযােদ্ধাদের নিয়ে ধানয়াকামালপুর-পিরােজপুর-বকশিগঞ্জ রােডে মাইন পুঁতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৬-৭টি গাড়ি ধ্বংস করেন। এছাড়া ২-৩ জন সঙ্গীসহ পাটক্ষেতের মধ্যে এম্বুশ করে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। সেপ্টেম্বর মাসে তারা ধানুয়াকামালপুর যুদ্ধে ৪০ জনের মতাে পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে আব্দুল মান্নান ১১ নম্বর সেক্টরের অপারেশনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পাওয়ার পর ৩রা ডিসেম্বর তার বাহিনী অন্য যােদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে চারদিক থেকে ধানুয়া-কামালপুর ক্যাম্পে পাকবাহিনীকে ঘিরে ফেললে তারা পরের দিন আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল মান্নানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রেহানা আক্তার। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড