বীর বিক্রম আব্দুল জব্বার পাটোয়ারী
আব্দুল জব্বার পাটোয়ারী, বীর বিক্রম (১৯৩০২০০০) অনারারি ক্যাপ্টেন ও মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সৈনিক। তিনি ১৯৩০ সালে চাঁদপুর জেলার কড়াইতলী চৌমুখাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।
আব্দুল জব্বার পাটোয়ারী ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। ইবিআরসি, চট্টগ্রাম থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টে পােস্টিং দেয়া হয়। এ রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থায় তিনি ১৯৬৫ সালে পাকভারত যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ১৯৭১ সালে তিনি রেজিমেন্টেই সুবেদার হিসেবে যশাের ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এ বছরই মার্চ মাসে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হলে আব্দুল জব্বার ঘটনার পরিণতি বুঝতে পেরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাইরে আসার পথ খুঁজছিলেন। এ-সময় পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী তাদের নীলনশা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে পাকবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সৈনিকদের বিভিন্ন অজুহাতে অস্ত্রচ্যুত, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান ও কৌশলে ছুটি দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে দিতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আব্দুল জব্বার তিন মাসের ছুটি নিয়ে ২২শে মার্চ নিজ বাড়ি চাঁদপুরে চলে আসেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি মিজানুর রহমান চৌধুরী এমএনএ-র সঙ্গে ভারতের আগরতলা যান। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের সঙ্গে প্রতিরােধ যুদ্ধে যােগ দেন। এরপর তিনি ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মােশাররফের অধীনে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত ফোর্স হিসেবে যুদ্ধ করেন। আব্দুল জব্বার ভারী অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। তাই তাঁকে ‘এস’ ফোর্সে মর্টার সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কসবা ও আখাউড়ায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তিনি প্রশংসিত হন। এছাড়া তিনি বেলুনিয়া সালদা নদী এলাকা, মন্দবাগ প্রভৃতি স্থানে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অসমান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
আব্দুল জব্বার ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আফিয়া বেগম। ২০০০ সালের ১লা মে এই বীর মুক্তিযােদ্ধা পরলােক গমন করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড