বীর প্রতীক আব্দুল জলিল
আব্দুল জলিল, বীর প্রতীক (১৯৪৩-২০১৭) সিপাহি ও একজন অকুতােভয় বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ‘রকেট জলিল’ নামে খ্যাত। তিনি ১৯৪৩ সালে যশাের জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার পাল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মােহর আলী মােড়ল এবং মাতার নাম ইয়ার বানু। ৬ ভাই ও ১ বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৪র্থ।
আব্দুল জলিল ঝিকরগাছার গঙ্গানন্দপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি যশাের ইপিআর-এর ৭ নম্বর উইং-এর অধীনে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি বিওপি-তে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেখান থেকে যশােরের ঝিকরগাছায় চলে আসেন এবং স্থানীয় প্রতিরােধ যােদ্ধাদের সঙ্গে যােগ দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি ভারতে চলে যান এবং ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর অধীনে বয়রা সাব-সেক্টরে যােগদান করেন। এ সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর নাজমুল হুদা। আব্দুল জলিল লেফটেন্যান্ট অলিক কুমার গুপ্তের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
যশােরের দোসহাতিনা (দশাতিনা)-য় পাকবাহিনীর একটি শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল। অক্টোবর মাসের শেষদিকে গণবাহিনীর ১৫ জন মুক্তিযােদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন ইপিআর যােদ্ধা কুয়াশার মধ্যে গােপনে দোসহাতিনায় পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে একযােগে গুলি চালান। পাকবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। আব্দুল জলিল ও তাঁর সহযােদ্ধাদের তেজোদীপ্ত আক্রমণে পাকবাহিনী পর্যদস্ত হয়ে পড়ে। এ-যুদ্ধে ১০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং ৫টি চাইনিজ রাইফেল ও ৪টি হেলমেট মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। অপরদিকে ১ জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট অলিক কুমার গুপ্ত, সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল জলিল। বিভিন্ন যুদ্ধে আব্দুল জলিলের অসাধারণ ক্ষিপ্রতার কারণে তিনি ‘রকেট জলিল’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। নভেম্বর মাসের প্রথমদিকে তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার সিংড়ি ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের রাস্তায় মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে টহলরত কয়েকজন পাকসেনাকে হতাহত করতে সক্ষম হন। এ মাসেই বেনেয়ালী এলাকা থেকে একজন বিদেশী নারী যাজককে তিনজন পাকসেনা ধরে নিয়ে যাচ্ছে – এ সংবাদ পেয়ে আব্দুল জলিল তাঁর সহযােদ্ধা হাজারী লাল তরফদারসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে ঐ পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাজককে উদ্ধার করেন। তাদের হাতে ২ জন পাকিস্তানি সদস্য নিহত হয় এবং একজনকে তাঁরা আটক করতে সমর্থ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সিপাহি আব্দুল জলিলের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২০১৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হালিমা বেগম। এ দম্পতি ৪ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনকজননী। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড