You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক আব্দুল জলিল শিকদার

আব্দুল জলিল শিকদার, বীর প্রতীক (১৯২৯-২০০৬) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার লােহাগড়া থানার চাচই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লােহাগড়া থানা শহর থকে ২ কিলােমিটার উত্তর দিকে চাচই গ্রামের অবস্থান। আব্দুল জলিলের পিতার নাম আব্দুল হক শিকদার এবং মাতার নাম পুটি বেগম। আব্দুল জলিল শিকদার নড়াইল স্কুল থেকে এন্ট্রাস এবং নড়াইল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ক্রিড়ামােদী, সাহসী ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন ছিল। ছাত্রজীবনে ভালাে ফুটবল খেলােয়াড় হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।
আব্দুল জলিল শিকদার কর্মজীবনের শুরুতে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। তিনি এসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর (এসআই) হিসেবে পুলিশে যােগ দেন। পরে সুবেদার হিসেবে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যােগদান করেন। ইপিআর-এর সুবেদার হিসেবে তিনি দুবার পশ্চিম পাকিস্তানে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ গভীরভাবে লক্ষ করেন। এর বিরুদ্ধে তাঁর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চে সাতক্ষীরা-কলােরােয়া বিওপি-তে কর্মরত থাকা অবস্থায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। তাঁর নেতৃত্বে ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যশােরের রাজবাড়িতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধে। এদিন তাঁরা পাকবাহিনীর বেলুচ রেজিমেন্টের সৈনিকদের আক্রমণ করেন। তাঁদের তীব্র আক্রমণে পাকসেনারা যশাের সেনানিবাসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ১২ই এপ্রিল আব্দুল জলিল যশােরের ঝিকরগাছায় পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এরপর তারা বেনাপােল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার চাকুলিয়ায় স্থাপিত ক্যাম্পে তিনি যােগ দেন। এখানে প্রথমে তিনি অনেক মুক্তিযােদ্ধাকে প্রশিক্ষণ প্রদান দেন। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযােদ্ধাদের তিনি দেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করেন। পরে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের তােকীপুরে স্থাপিত ক্যাম্পের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানেও তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এরপর সাতক্ষীরার উল্টোদিকে ভারতের ভেতরে স্থাপিত হিন্দোল অপারেশন ক্যাম্পে তিনি যােগ দেন। এখান থেকে ক্যাপ্টেন হুদার নেতৃত্বে তিনি বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধে অংশ নেন। একাধিকবার তিনি পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আব্দুল জলিল শিকদারকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪২১, খেতাবের সনদ নম্বর ১৭১)।
স্বাধীনতার পর আব্দুল জলিল শিকদার বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)-এ যােগদান করেন। ১৯৮০ সালে তিনি সুবেদার মেজর হিসেবে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের ১৮ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৭ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হােসনে আরা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!