You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক আব্দুল বাতেন খান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক আব্দুল বাতেন খান

আব্দুল বাতেন খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৩) হাবিলদার ও ২ নম্বর সেক্টরের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৩ সালের ১লা জানুয়ারি গাজীপুর জেলার কাপাশিয়া উপজেলার আড়াল বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সামছুদ্দীন খান এবং মাতার নাম হাছনি বেগম। আব্দুল বাতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-এর নিরঙ্কুষ বিজয়ে তিনি অন্যান্য বাঙালিদের মতাে অধিকার আদায়ে আশান্বিত হন। তিনি মনে করেন এবার বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসন-শােষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটবে। কিন্তু নির্বাচনােত্তর পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নতুন করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ তাঁকে বিক্ষুব্ধ করে তােলে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্দীপ্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টের অধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি ও বাঙালি সৈনিকদের ওপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি তৎক্ষণাৎ মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রম-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন। শুরু হয় হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধযুদ্ধ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রথম প্রতিরােধযুদ্ধে ক্যাপ্টেন মতিনের নেতৃত্বে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এরপর সহযােদ্ধাদের সঙ্গে তিনি তিতাস নদীর ব্রিজে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধযুদ্ধে অংশ নেন। সেখান থেকে তাঁরা ভারতবাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সালদা নদী এলাকায় অবস্থান নেন। নদীর অপর পাড়ে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। এ নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কৌশলগত দিক দিয়ে উভয় পক্ষের জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে অসংখ্যবার উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৭ই জুলাই পাকসেনাদের একটি দল সালদা নদীর পার্শ্ববর্তী রেলস্টেশন থেকে নয়নপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। বাতেন খান অন্যান্য সহযােদ্ধাদের নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালান। এতে পাকসেনারা বিপর্যস্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কয়েকজন নিহত ও আহত হয়। ঘটনাটি মনােরা সেতুর নিকটে ঘটে। এ-যুদ্ধে বাতেন খান মারাত্মকভাবে আহত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আব্দুল বাতেন খানের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম হেনা বেগম। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড