You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম আব্দুল বারেক

আব্দুল বারেক, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪১) হাবিলদার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪১ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শাহনেওয়াজ এবং মাতার নাম জোবেদা খাতুন। আব্দুল বারেক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। এর অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাস। তিনি ছিলেন ডেল্টা কোম্পানিতে। এর কমান্ডার ছিলেন মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রম। মধ্যমার্চ এ কোম্পানিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর একদিন পূর্বে মেজর খালেদ মােশাররফ, বীর উত্তমকে কিছুসংখ্যক বাঙালি সেনাসদস্যসহ সিলেটের শমশেরনগর পাঠানাে হয়। এসবই ছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অপারেশন সার্চলাইটনীলনকশার অংশ। অতএব মেজর শাফায়াত জামিল পূর্ব থেকেই তার সেনাদের নিয়ে সতর্ক ছিলেন। শাফায়াত জামিলের সঙ্গে খালেদ মােশাররফের গােপনে যােগাযােগ হয়। ২৫শে মার্চ রাতেই শাফায়াত জামিল তাঁর বাঙালি সেনাদের নিয়ে বিদ্রোহ করেন। কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল খিজির হায়াত খানসহ বেশ কয়েকজন অফিসারকে বন্দি করেন। আব্দুল বারেক মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। ২৭শে মার্চ মেজর খালেদ মােশাররফ তাঁর সেনাদের নিয়ে এসে এখানে যােগ দেন। শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। এ বিদ্রোহ সংঘটনের নেতৃত্বে হাবিলদার আব্দুল বারেক সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানি সেনাদের তিনি নিরস্ত্র, বন্দি ও আটক করতে সাহসী ভূমিকা রাখেন। মেজর খালেদ মােশাররফের যােগদানের পর মেজর জামিল বিদ্রোহী বাঙালি সেনাদলের কমান্ড তাঁর নিকট হস্তান্তর করেন। শুরু হয় প্রতিরােধ যুদ্ধ। ১৩ই এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে পাকবাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়। এ আক্রমণ ছিল যুগপৎ স্থল, নৌ ও বিমান পথে। এসব আক্রমণ সফলতার সঙ্গে প্রতিহত করা হয়। এরপর মুক্তিযােদ্ধারা পিছিয়ে গিয়ে আখাউড়া ও গঙ্গাসাগর এলাকায় অবস্থান নেন। এপ্রিল মাসের শেষদিকে পাকবাহিনী আখাউড়া আক্রমণ করলে এখানকার যুদ্ধে আব্দুল বারেকের নিক্ষিপ্ত মর্টার শেলের আঘাতে পাকসেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিনগান পােস্ট ধ্বংস হয়ে যায়। হতাহত হয় বহু পাকসেনা। সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে ১৫ই জুন কুমিল্লার বুড়িচং-এ অবস্থিত পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর আক্রমণ হয়। এ আক্রমণে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হিনত হয়। আব্দুল বারেক এ আক্রমণে বীরােচিত ভূমিকা পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে হাবিলদার আব্দুল বারেকের অসামান্য সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রীর নাম মনােয়ারা খাতুন। এ দম্পতি ৫ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!