You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক আব্দুল বাসেত - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক আব্দুল বাসেত

আব্দুল বাসেত, বীর প্রতীক (১৯৪৯-১৯৭১) কৃষক পরিবারের সন্তান, অনিয়মিত আনসার সদস্য ও শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৯ সালে ফেনী জেলার সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আবুল বাসার। তাঁর পিতার নাম সুলতান আহম্মেদ এবং মাতার নাম মােস্তফা খাতুন।
কৃষক পরিবারের সন্তান আব্দুল বাসেত আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অনিয়মিত সদস্য ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে আব্দুল বাসেত স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে ২নং সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন এবং কয়েকটি যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধকালে নিয়মিত মুক্তিযােদ্ধাদের সমন্বয়ে ৩টি বিশেষ ফোর্স গঠন করা হয়। তার একটি ছিল ‘কে’ ফোর্স। ‘কে’ ফোর্সের জন্য তখন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ও ২ নম্বর সেক্টরের যােদ্ধাদের নিয়ে ৯ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন করা হয়। আব্দুল বাসেতকে নবগঠিত এ রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে ৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযােদ্ধারা সীমান্ত এলাকা থেকে কুমিল্লা অভিমুখে অভিযান শুরু করেন। তাঁরা আলফা ও ব্রাভাে নামে ২ কোম্পানিতে বিভক্ত হয়ে ১১ই নভেম্বর কৃষ্ণপুরে পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আব্দুল বাসেত সাহসী ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযােদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে ক্রমান্বয়ে পিছু হটতে থাকে। ১২ই নভেম্বর এ-যুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে হঠাৎ হানাদার বাহিনীর ছােড়া গুলিতে আব্দুল বাসেতসহ ২ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন। অপরদিকে, ১৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। তারা সম্পূর্ণ পরাস্ত হয়ে সালদা নদী, কসবা, মন্দভাগ প্রভৃতি এলাকার প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়। যুদ্ধের পর সহযােদ্ধারা গ্রামবাসীর সহযােগিতায় শহীদ আব্দুল বাসেতকে কসবার মুক্তাঞ্চলে সমাহিত করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা এবং বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ আব্দুল বাসেত-কে বীর প্রতীক (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। নিজ এলাকায় শহীদ আব্দুল বাসেতের নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। অবিবাহিত শহীদ মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল বাসেতের এক ভাই রিকশা এবং অন্য ভাই টেম্পাে চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড