You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক আব্দুল মজিদ

আব্দুল মজিদ, বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতােভয় সৈনিক। তাঁর জন্ম গাজীপুর জেলার বাের্ড বাজারের কলমেশ্বরে। তাঁর পিতা জনাব আলী এবং মাতা আহ্লাদি বেগম।
আব্দুল মজিদ ১৯৪২ সালের ১৩ই জুলাই ব্রিটিশ রাজকীয় সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। তিনি বার্মা বর্ডারে ইস্টার্ন সেক্টরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন এবং কালিনা হিল যুদ্ধে আহত হন। যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি খেতাবপ্রাপ্ত হন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর সুবেদার মেজর গণির সঙ্গে ১ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৬৫ সালে পাকভারত যুদ্ধে লাহাের সেক্টরে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
১৯৭১ সালে আব্দুল মজিদ ১ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে যশাের চৌগাছায় কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালানােকালে তিনি তাঁর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল জলিলের নেতৃত্বে ফিল্ড ট্রেনিং-এ নিয়ােজিত ছিলেন। ৩০শে মার্চ ভােরে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের নিয়ে অস্ত্রাগার ভাঙ্গতে যান। এসময় শত্রুবাহিনী তিন দিক থেকে তাঁদের ঘেরাও করে। তিনি ক্যাপ্টেন হাফিজ ও লেফটেন্যান্ট আনােয়ারকে তাঁদের সঙ্গে যােগ দিতে সম্মত করান এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তারা সুকৌশলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে চৌগাছায় সমবেত হন এবং ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে ১ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআরের সৈনিক ও স্থানীয় জনগণকে নিয়ে প্রতিরােধ যুদ্ধ শুরু করেন। আব্দুল মজিদ বিখ্যাত কাগজপুকুর যুদ্ধসহ বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। জুন মাসে তিনি ৮০০ সৈন্য নিয়ে ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে তেলঢালায় গিয়ে ‘জেড’ ফোর্সে যােগ দেন। তেলঢালা ক্যাম্পে প্রশিক্ষক হিসেবে নতুন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ শেষে আগস্ট মাসের শেষদিকে তিনি ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধে অংশ নেন। জামালপুরের নকশী বিওপি, সিলেটের কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, চারঘাট ও এমসি কলেজ যুদ্ধে তিনি প্রশংসনীয় অবদান রাখেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযােদ্ধা আবদুল মজিদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে ১৯৭৬ সালে তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসরে যান। তিনি ৪ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী জরিনা বেগম। ২০০৫ সালের ২৮শে আগস্ট এই বীর মুক্তিযােদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!