বীর বিক্রম আব্দুল মজিদ
আব্দুল মজিদ, বীর বিক্রম (১৯৫১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে দিনাজপুর জেলার বিরল থানার রামচন্দ্রপুর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী আদার মােহাম্মদ এবং মাতার নাম আহেলা বেগম। আব্দুল মজিদ পশ্চিম রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং মুন্সিপাড়া হাইস্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। আব্দুল মজিদ ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ইপিআর-এর দিনাজপুর কুঠিবাড়ি হেডকোয়ার্টার্সে যােগদান করেন। ঠাকুরগাঁও সেক্টরে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয়বার তিনি ইপিআর-এ যােগ দিতে সক্ষম হন। তাঁর পিতার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি এ বাহিনীতে যােগ দেন।
আব্দুল মজিদ ১৯৭১ সালে ইপিআর-এর রংপুরস্থ ১০ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। ২৭শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন নওয়াজিস। আব্দুল মজিদ রংপুর জেলার তিস্তামুখ ঘাট, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও নাগেশ্বরীতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এসব যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন।
আব্দুল মজিদের যুদ্ধক্ষেত্র ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। এ সেক্টরের পারুলিয়া ব্রিজ ধ্বংস এবং বড়খাতা গ্রামে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণে আব্দুল মজিদ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। জুলাই মাসে মুক্তিযােদ্ধারা পারুলিয়া সেতু ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি এ অভিযানের অগ্রবর্তী দলের গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন। সেতুর কাছাকাছি যাওয়ার পর পাকবাহিনীর একটি দল তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এক পর্যায়ে আব্দুল মজিদের সঙ্গী যােদ্ধারা তার থেকে দূরে চলে গেলে তিনি একাই যুদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি সাহস ও কৌশল প্রয়ােগ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হন। বড়খাতা গ্রামে পাকসেনা ও রাজাকাররা অতর্কিত আক্রমণ করলে আব্দুল মজিদ অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমণ করেন। ফলে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এখানে ২ জন পাকসেনা মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আব্দুল মজিদকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ১৯৪, খেতাবের সনদ নম্বর ১১৯)।
মুক্তিযুদ্ধের পর আব্দুল মজিদ বিডিআর (বর্তমান বিজিবি)-এ যােগদান করেন। তিনি বিডিআর-এর রংপুর, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা ও ঢাকার পিলখানায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি পিতার পরামর্শে চাকরি ত্যাগ করেন। পরে তিনি নিজ গ্রামে একটি দোকান পরিচালনা করেন।
আব্দুল মজিদ খুবই সাহসী এবং সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মােছা. মােজলেশা বেগম। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড