আব্দুল মজিদ পাটোয়ারী হত্যাকাণ্ড
আব্দুল মজিদ পাটোয়ারী হত্যাকাণ্ড (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ৫ই জুলাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলসামস বাহিনীর হাতে ফরিদগঞ্জের যে-সকল মানুষ অমানুষিক নির্যাতনে প্রাণ হারায়, তাদের মধ্যে ফরিদগঞ্জ থানার হর্নিদুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ পাটোয়ারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। তিনি ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং ফরিদগঞ্জ থানার কালিরবাজার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি।
ঘটনার দিন গভীর রাতে পাকহানাদার বাহিনী স্থানীয় দালাল ও রাজাকারদের নিয়ে আব্দুল মজিদ পাটোয়ারীর বাড়ি ঘেরাও করে। ভােরে বাড়ির লােকজন ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়ির চতুর্দিক পাকবাহিনী ও রাজাকাররা ঘিরে রেখেছে। তখন বাড়ির লােকজন দৌড়াদৌড়ি ও চিৎকার শুরু করে। এ অবস্থায় হানাদাররা বাড়ির লােকজনদের হত্যার জন্য ঘরে অগ্নিসংযােগ করে। আগুনের লেলিহান শিখায় টিকতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে অনেকে পাকবাহিনীর বুটজুতার লাথি ও রাইফেলের বাটের আঘাতে জর্জরিত শরীর নিয়ে তাদের পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকে মার খেয়ে পালিয়ে যায়। রাজাকাররা বাড়ির আলমিরা, ট্রাঙ্ক ও সিন্ধুক ভেঙ্গে লুটপাট করে। আবদুল মজিদ পাটোয়ারী লােকজনের ছুটাছুটি ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়েই খালি গায়ে টুপি মাথায় দিয়ে সাধারণের বেশে পাকবাহিনীর পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। মুখে সাদা দাড়ি, মাথায় টুপি ও বৃদ্ধ মানুষ ভেবে পাকবাহিনী। প্রথমে বিষয়টি আমলে নেয়নি। হঠাৎ দূর থেকে গজারিয়া মাঝি বাড়ির কুখ্যাত রাজাকার জল্লাদ আবদুল লতিফ মাঝি দৌড়ে এসে পাকবাহিনীর কমান্ডারকে বলে- ঐ বৃদ্ধই আব্দুল মজিদ পাটোয়ারী। পাকসেনারা তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে তাঁকে ধরে ফেলে। তারা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল মজিদকে পিটমােড়া করে বেঁধে ক্যাম্পে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। তারা রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে তার হাড়-মাংস এক করে দেয়। এত নির্যাতন করেও হানাদারদের তৃপ্তি মেটেনি। তারা তাঁকে নির্যাতনকেন্দ্র ডিসি হলের ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়। তাতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা তাঁর পা ওপরে বেঁধে ঝুলন্ত শরীরে কেরােসিন ঢেলে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেদিন আব্দুল মজিদের চিৎকারে আশ-পাশের মানুষ লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে। ঐ পথ দিয়ে হাঁটলে ফরিদগঞ্জের মানুষ আজো তাঁর মরণ-কান্নার সুর অনুভব করে।
আব্দুল মজিদ পাটোয়ারী ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং চাঁদপুর মুন লাইট সল্ট ফ্যাক্টরির মালিক। মৃত্যুকালে তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর মেঝ ছেলে হারুন-অররশিদ একজন মুক্তিযােদ্ধা। [দেলােয়ার হােসেন খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড