বীর প্রতীক আব্দুল ওয়াহিদ
আব্দুল ওয়াহিদ, বীর প্রতীক (১৯২৯-২০০৯) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালে ২৫শে জুলাই সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার বাইকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রহমান এবং মাতার নাম রইছা বেগম। তিনি জালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করেন। আব্দুল ওয়াহিদ তার কর্মজীবন শুরু করেন ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে। ইপিআর-এর প্রশিক্ষণ শেষে তিনি সিলেটের তেলিয়াপাড়া সীমান্তে তার প্রথম কর্মস্থলে নিযুক্ত হন। তিনি ইপিআর-এর সিপাহি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৭শে মার্চ তিনি বিদ্রোহ ঘােষণা করে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন এবং ঐদিনই ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মেজর কে এম সফিউল্লাহ ও এ এন এম নুরুজ্জামান পর্যায়ক্রমে ৩ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। আব্দুল ওয়াহিদ মনতলা সাব-সেক্টরের ক্যাপ্টেন এ এস এম নাসিমের নেতৃত্বে বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মাধবপুর, সাহাবাজপুর, আশুগঞ্জ, কিশােরগঞ্জ, মঠখােলা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কোটাদিঘি, কেল্লারবর, তুলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধ করে বীরত্বের পরিচয় দেন। সিলেটের ধলই বিওপি দখলের যুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান ছিল।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আব্দুল ওয়াহিদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৬৬, খেতাবের সনদ নম্বর ২১৬)।
মুক্তিযুদ্ধের পর আব্দুল ওয়াহিদ বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যােগদান করেন। ১৯৮১ সালের ১৩ই জুন তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২ কন্যা ও ৫ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রেজিয়া বেগম। আব্দুল ওয়াহিদ ২০০৯ সালের ২৯শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। ২০১২ সালে তাঁর সম্মানে প্রতিবছর এলাকায় বীর প্রতীক আব্দুল ওয়াহিদ স্মৃতি ফুটবল প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠিত হয়। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড