বীর প্রতীক আব্দুল কুদ্দুস
আব্দুল কুদ্দুস, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি বিলাত মিয়া নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৮শে মার্চ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার গােগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল শহীদ এবং মাতার নাম কাতেমুন নেছা। তিনি স্থানীয় জোয়ারমাগুরুপ্তা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি এবং চুনারুঘাট ডি সি হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিপাহি পদে যােগদান করেন। এরপর তিনি রেজিমেন্টের অধীনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও মনতলায় মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
আব্দুল কুদ্দুস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা, আখাউড়া, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট ইত্যাদি স্থানের যুদ্ধে বিরল বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়েও তিনি মরণপণ যুদ্ধ করেন। ২১শে অক্টোবর আব্দুল কুদ্দুসসহ মুক্তিযােদ্ধারা কসবার লাতুমুড়ায় অবস্থিত পাকসেনাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। শত্রুপক্ষ পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে ৩ ঘণ্টাব্যাপী তীব্র যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানিদের নিক্ষিপ্ত শেলের স্প্রিন্টারে আব্দুল কুদ্দুস আহত হন। তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। আহত হওয়ার পরও তিনি অনেকক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যান। ডিসেম্বরে মুক্তিযােদ্ধারা কুমিল্লা সেনানিবাসে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ পরিচালনা করেন, আব্দুল কুদ্দুস তাতেও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তিনি আখাউড়ায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আব্দুল কুদ্দুসকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪০০, খেতাবের সনদ নম্বর ১৫০)। মুক্তিযুদ্ধের পর আব্দুল কুদ্দুস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে যােগ দেন। ১৯৮৯ সালের ২৭শে জুলাই তিনি নায়েক হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ২ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সালমা বেগম। তিনি বর্তমানে গােগাউড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড