You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক আব্দুল গফুর ওরফে গাফফার

আব্দুল গফুর ওরফে গাফফার, বীর প্রতীক (১৯৩৬-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩৬ সালের ১১ই আগস্ট নােয়াখালীর চাটখিল থানার ছয়ানি টগবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বশির উল্লাহ সর্দার এবং মাতার নাম বদরের নেসা। গেজেটে তার নাম ‘আব্দুল গাফফার’ লেখা হলেও প্রকৃত নাম আব্দুল গফুর। তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। আব্দুল গফুরের কর্মজীবন শুরু হয় ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান। রাইফেলস)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে। তিনি অন্য ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার পিলখানা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগদানকালে ইপিআর-এর নায়েক পদে নিয়ােজিত ছিলেন।
আব্দুল গফুর ১৯৭১ সালে যশাের ইপিআর সেক্টরের ৪ নম্বর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। ২৬শে মার্চ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ৩০শে মার্চ কুষ্টিয়া শহরে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরােধ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। এ-যুদ্ধে ২৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার বিষয়খালীতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধেও অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। এরপর তিনি ভারতে যান। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও পরবর্তীতে মেজর এম এ মঞ্জুরের অধীনে যুদ্ধ করেন। তাঁর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের কল্যাণীতে এ সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল।
আব্দুল গফুরের যুদ্ধ-এলাকা ছিল বানপুর সাব-সেক্টর। এ সেক্টরের অধীনস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলার ধােপাখালীতে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাটি ও প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল। এদের শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে এ এলাকায় গেরিলা কার্যক্রম এবং পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের এ ঘাঁটির ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ৮ই আগস্ট ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ আক্রমণ পরিচালিত হয়। অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে আব্দুল গফুরও আক্রমণকারী দলে ছিলেন। মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। ফলে দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। পাকবাহিনীর তুলনায় সংখ্যায় কম ও পুরনাে অস্ত্রশস্ত্র সত্ত্বেও প্রবল দেশপ্রেম ও সাহসের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধারা যুদ্ধ করতে থাকেন। অসীম সাহসী আব্দুল গফুর শত্রুদের ঘায়েল করতে তাদের কাছাকাছি চলে যান। এক পর্যায়ে পাকসেনাদের গুলি এসে তার বুকে লাগে। তিনি সঙ্গে-সঙ্গে শহীদ হন। এ-যুদ্ধে আরাে কয়েকজন যােদ্ধা শহীদ ও আহত হন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আব্দুল গফুরের লাশ অন্য যােদ্ধারা নিয়ে আসেন। জীবননগরে তার লাশ দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন এবং নিজ জীবন উৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আব্দুল গফুরকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (তার গেজেট নম্বর ৪৬০, খেতাবের সনদ নম্বর ২১০)। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম সুফিয়া বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!