বীর প্রতীক আব্দুল আলিম
আব্দুল আলিম, বীর প্রতীক (১৯৫৩-১৯৯৫) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালে কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত সাহাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল জলিল বিশ্বাস, মাতার নাম চিনিরন নেছা।
পারিবারিক প্রয়ােজনে আব্দুল আলিম কৃষি কাজে জড়িত থাকা সত্ত্বেও পাশাপাশি মুজাহিদ বাহিনীতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ভীষণ উদ্দীপ্ত হন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করলে তিনি পাকবাহিনীকে প্রতিরােধ এবং মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার শপথ নিয়ে ৯নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। পরে ৮নং সেক্টরেও যুদ্ধ করেন। তিনি ভারতের বিহারের চাকুলিয়া প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ৪৫ দিনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মেজর এম এ জলিলের অধীনে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার নেতৃত্বে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
আব্দুল আলিম খুলনা জেলার কালিগঞ্জ থানার বসন্তপুর বিওপিতে (Border Out Post) পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। ১৩ই জুন বসন্তপুরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এ-যুদ্ধ চলে। এতে পাকবাহিনী, তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার ও অবাঙালি দালালরা টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। এযুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ১৯ জন নিহত এবং বসন্তপুর সীমান্ত শত্রুমুক্ত হয়। অপরদিকে ৭ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন। আবদুল আলিমসহ ১৪-১৫ জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। শরীরে বােমার প্রিন্টার ও গুলির আঘাতে মারত্মকভাবে আহত হয়ে চিকিৎসা শেষে আগস্ট মাসে আব্দুল আলিম পুনরায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আব্দুল আলিমকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৯৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বীরযােদ্ধা আব্দুল আলিমের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর স্ত্রীর নাম জরিনা খাতুন। এ দম্পতির ৪ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [মাে. ওসমান গনী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড