You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক আব্দুল আউয়াল

আব্দুল আউয়াল, বীর প্রতীক (১৯৪৩-২০০৮) হাবিলদার এবং প্রথমে ২নং সেক্টর ও পরবর্তীতে ‘কে’ ফোর্সের অধীনে একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্বপালনকারী মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৩ সালের ২৫শে এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন মান্দারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মােহর আলী এবং মাতার নাম সাহেদা বেগম। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে হাবিলদার পদে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যশাের সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পূর্ব বাংলায় যখন গণআন্দোলন চলছিল, তখন তিনি ছুটিতে নিজ বাড়িতে ছিলেন। চাকরিকালে একজন নিম্নপদস্থ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পাকিস্তানি সেনাদের তাদের প্রতি ঘৃণ্য ও অবজ্ঞামূলক আচরণ অন্যান্যদের মতাে তাঁকেও বিক্ষুব্ধ করে। ২৫শে মার্চ রাতে বাঙালিদের ওপর পাকহানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে যােগদানে অনুপ্রাণিত করে। যশাের সেনানিবাসে অবস্থানরত ১ম ইস্ট বেঙ্গলের বাঙালি সেনাসদস্যদের ওপর বালুচ রেজিমেন্টের হামলা ও হত্যাযজ্ঞ তাঁকে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তােলে। তিনি চাকরিতে ফিরে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। প্রথমে তিনি ২নং সেক্টরে মেজর খালেদ মােশাররফ, বীর উত্তম-এর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি ‘কে’ ফোর্সের ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হয়ে যুদ্ধ করেন। তাঁর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের অধীনে তিনি একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। সাবসেক্টর অধিনায়ক আইনউদ্দিনের নির্দেশে তিনি তাঁর কোম্পানির সেনাসদস্যদের নিয়ে গােপীনাথপুর গ্রামের একটি উঁচু টিলায় অবস্থান নিয়ে অগ্রসরমাণ একদল পাকসেনার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা এবং অনেককে আহত করতে সক্ষম হন। এরপর উজানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে তার বাহিনীর সঙ্গে পাকহানাদারদের যুদ্ধ হয়। সেখানে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে ৬ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহন হন। হাবিলদার আব্দুল আউয়াল কুমিল্লা জেলার ইমামবাড়ী, আকবরপুর, লতামুড়া, মাধবপুর, কসবা, তারা, মেহলরি, সিদলাই ও কুমিল্লা সেনানিবাসে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করেন। অনুরূপভাবে বীরত্বের সঙ্গে তিনি কসবা থানার ইমামবাড়ী রেলস্টেশনে পাকসেনাদের ওপর দুর্ধর্ষ আক্রমণ চালান। এতে বেশকিছু পাকসেনা আহত ও নিহত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল আউয়ালকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ পুত্র ৬ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মেহরা বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!