You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক আবুল হােসেন

আবুল হােসেন, বীর প্রতীক (১৯৫৪-১৯৭১) কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যােগদানকারী শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা এবং প্রাদেশিক মন্ত্রী ও নেজামে ইসলামী দলের নেতা মাওলানা ইসহাকের ওপর হামলাকারী। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকার মনেশ্বর রােডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. ইসমাইল মিয়া এবং মাতার নাম মাজেদা খাতুন। আবুল হােসেন এ দম্পতির ৩ পুত্র ও ৬ কন্যার মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই আবুল হােসেন রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষিত ৬-দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১দফার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। তিনি ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর পক্ষে কাজ করেন। ৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধু অসহযােগ আন্দোলন-এর ডাক দিলে আবুল হােসেন তাতে সক্রিয় অংশ নেন।
ঢাকা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রত্ব ত্যাগ করে আবুল হােসেন মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। তিনি কয়েকজন বন্ধুসহ জুন মাসে ভারতের আগরতলায় গিয়ে ২ নম্বর সেক্টরে যুক্ত হন। সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স মেলাঘরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ঢাকার অধিবাসী হওয়ায় ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গেরিলা অপারেশন পরিচালনার জন্য অন্যদের সঙ্গে আবুল হােসেনকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ৩ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তিনি কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। তিনি গেরিলা যােদ্ধা এনায়েতের সাহায্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করেন পূর্ব পাকিস্তানে হানাদারদের দ্বারা গঠিত তাবেদার ডা. এ এম মালিকের মন্ত্রিসভার সদস্য নেজামে ইসলামী দলের নেতা মাওলানা মাে. ইসহাকের ওপর। ২৫শে সেপ্টেম্বর আবুল হােসেন ও এনায়েত ঢাকার লালবাগস্থ নেজামে ইসলামীর অফিসের সামনে মাওলানা ইসহাকের গাড়িতে বােমা হামলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। তাঁরা মােটর সাইকেলে করে ইসহাকের গাড়ি অনুসরণ করেন। শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেডিকেল কলেজের সামনে ইসহাকের গাড়িতে গ্রেনেড ও ফসফরাস বােমা নিক্ষেপ করতে সক্ষম হন। এ আক্রমণে মাওলানা ইসহাক মারাত্মকভাবে আহত হয়। এ খবর পরদিন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আবুল হােসেন তার গেরিলা দলের সদস্যদের সঙ্গে কেরানীগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। ১৭ই ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসার পথে ধলেশ্বরী নদীতে তাঁদের নৌকা ডুবে যায়। এতে বীর মুক্তিযােদ্ধা আবুল হােসেন, মাে. শহিদুল্লাহ, বীর প্রতীক-সহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা নিহত হন। পরে আবুল হােসেনের লাশ আজিমপুর নতুন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আবুল হােসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!